পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ぬbf গল্পগুচ্ছ হস্টেলে গিয়া তাহার পরিচয় পাইয়াছিলাম। আমি সেখানে থাকিতে নানা উপায়ে বাবাকে লুকাইয়া নববিরহতাপে অত্যন্ত উত্তপ্ত দই-একখানা চিঠি তাহাকে পাঠাইতে আরম্ভ করিয়াছিলাম। তাহাতে কোটেশন-মাকৰ্ণ না দিয়া আমাদের নব্য কবিদের কাব্য ছকিয়া অনেক কবিতা ঢালিয়াছিলাম; ভাবিয়াছিলাম— প্রণয়িনীর কেবল প্রেম আকর্ষণ করাই যথেষ্ট নহে, শ্রদ্ধাও চাই। শ্রদ্ধা পাইতে হইলে বাংলা ভাষায় যেরপে রচনাপ্রণালীর আশ্রয় লওয়া উচিত সেটা আমার স্বভাবত আসিত না, সেইজন্য মণেী বজ্ৰসমংেকাঁণে সত্ৰস্যেবাসিত মে গতিঃ । অথাৎ, অন্য জহরিরা যে-সকল মণি ছিদ্র করিয়া রাখিয়াছিলেন, আমার চিঠি তাহা সত্রের মতো গাঁথিয়া পাঠাইত। কিন্তু, ইহার মধ্যে মণিগুলি অন্যের, কেবলমাত্র সত্রটকৃই আমার, এ বিনয়টুকু স্পষ্ট করিয়া প্রচার করা আমি ঠিক সংগত মনে করি নাই— কালিদাসও করিতেন না, যদি সত্যই তাঁহার মণিগুলি চোরাই মাল হইত। চিঠির উত্তর যখন পাইলাম তাহার পর হইতে যথাসথানে কোটেশন-মাক দিতে আর কাপণ্য করি নাই। এটুকু বেশ বোঝা গেল, নববধ বাংলা ভাষাটি বেশ জানেন। তাঁহার চিঠিতে বানান-ভুল ছিল কি না তাহার উপযন্ত বিচারক আমি নই, কিন্তু সাহিত্যবোধ ও ভাষাবোধ না থাকিলে এমন চিঠি লেখা যায় না, সেটুকু আন্দাজে বঝিতে পারি। সন্ত্রীর বিদ্যা দেখিয়া সৎস্বামীর যতটুকু গব ও আনন্দ হওয়া উচিত তাহা আমার হয় নাই এমন কথা বলিলে আমাকে অন্যায় অপবাদ দেওয়া হইবে, কিন্তু তারই সঙ্গে একট অন্য ভাবও ছিল। সে ভাবটুকু উচ্চদরের না হইতে পারে,কিন্তু স্বাভাবিক। মুশকিল এই যে, যে উপায়ে আমার বিদ্যার পরিচয় দিতে পারিতাম সেটা বালিকার পক্ষে দগম। সে যেটুকু ইংরাজি জানে তাহাতে বাক-মেকলের ছাঁদের চিঠি তাহার উপরে চালাইতে হইলে মশা মারিতে কামান দাগা হইত—মশার কিছুই হইত না, কেবল ধোওয়া এবং আওয়াজই সার হইত। আমার যে তিনটি প্রাণের বন্ধ ছিল তাহাদিগকে আমার সীর চিঠি না দেখাইয়া থাকিতে পারিলাম না। তাহারা আশ্চর্য হইয়া কহিল, “এমন সত্ৰী পাইয়াছ, ইহা তোমার ভাগ্য।” অর্থাৎ, ভাষান্তরে বলিতে গেলে এমন সীর উপযন্ত স্বামী আমি নই। নিঝরিণীর নিকট হইতে পত্রোত্তর পাইবার পবেই যে কখানি চিঠি লিখিয়া ফেলিয়াছিলাম তাহাতে হাদয়োচ্ছাস যথেষ্ট ছিল, কিন্তু বানান-ভুলও নিতান্ত অলপ ছিল না। সতক হইয়া লেখা যে দরকার তাহা তখন মনেও করি নাই। সতক হইয়া লিখিলে বানান-ভুল হয়তো কিছু কম পড়িত, কিন্তু হৃদয়োচ্ছনাসটাও মারা যাইত। এমন অবস্থায় চিঠির মধ্যস্থতা ছাড়িয়া মোকাবিলায় প্রেমালাপই নিরাপদ। সুতরাং, বাবা আপিসে গেলেই আমাকে কালেজ পালাইতে হইত। ইহাতে আমাদের উভয় পক্ষেরই পাঠচর্চায় যে ক্ষতি হইত আলাপচচায় তাহা সদসদ্ধ পোষণ করিয়া লইতাম । বিশ্বজগতে যে কিছরই একেবারে নষ্ট হয় না, এক আকারে যাহা ক্ষতি অন্য আকারে তাহা লাভ-বিজ্ঞানের এই তথ্য প্রেমের পরীক্ষাশালায় বারবার যাচাই করিয়া লইয়া একেবারে নিঃসংশয় হইয়াছি। এমনসময়ে আমার সন্ত্রীর জাঠতুত বোনের বিবাহকাল উপস্থিত—আমরা তো যথানিয়মে আইবড়োভাত দিয়া খালাস, কিন্তু আমার স্ত্রী স্নেহের আবেগে এক কবিতা