পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দপহরণ 8షిపి রচনা করিয়া লাল কাগজে লাল কালি দিয়া লিখিয়া তাহার ভগিনীকে না পাঠাইয়া থাকিতে পারিল না। সেই রচনাটি কেমন করিয়া বাবার হস্তগত হইল। বাবা তাঁহার বধমাতার কবিতায় রচনানৈপুণ্য সম্ভাবসৌন্দয প্রসাদগণে প্রাঞ্জলতা ইত্যাদি শাস্ত্রসম্মত নানা গণের সমাবেশ দেখিয়া অভিভূত হইয়া গেলেন। তাঁহার বন্ধ বন্ধ দিগকে দেখাইলেন, তাঁহারাও তামাক টানিতে টানিতে বলিলেন, “খাসা হইয়াছে!” নববধরে যে রচনাশক্তি আছে, এ কথা কাহারও অগোচর রহিল না। হঠাৎ এইরুপ খ্যাতিবিকাশে রচয়িত্রীর কণমলে এবং কপোলম্বয় অর্ণবণ হইয়া উঠিয়াছিল; অভ্যাসরুমে তাহা বিলতে হইল। পবেই বলিয়াছি, কোনো জিনিস একেবারে বিলুপ্ত হয় না— কী জানি, লাজার আভাটকুে তাহার কোমল কপোল ছাড়িয়া আমার কঠিন হৃদয়ের প্রচ্ছন্ন কোণে হয়তো আশ্রয় লইয়া থাকিবে । কিন্তু তাই বলিয়া স্বামীর কতব্যে শৈথিল করি নাই। অপক্ষপাত সমালোচনার বারা সত্রীর রচনার দোষ সংশোধনে আমি কখনোই আলস্য করি নাই। বাবা তাহাকে নিবিচারে যতই উৎসাহ দিয়াছেন, আমি ততই সতকতার সহিত কটি নিদেশ করিয়া তাহাকে যথোচিত সংযত করিয়াছি। আমি ইংরাজি বড়ো বড়ো লেখকের লেখা দেখাইয়া তাহাকে অভিভূত করিতে ছাড়ি নাই। সে কোকিলের উপর একটা-কী লিখিয়াছিল, আমি শেলির সকাইলাক ও কীটসের নাইটিঙ্গেল শনাইয়া তাহাকে একপ্রকার নীরব করিয়া দিয়াছিলাম। তখন বিদ্যার জোরে আমিও যেন শেলি ও কীটসের গৌরবের কতকটা ভাগী হইয়া পড়িতাম। আমার সাঁও ইংরাজি সাহিত্য হইতে ভালো ভালো জিনিস তাহাকে তজমা করিয়া শনাইবার জন্য আমাকে পীড়াপীড়ি করিত, আমি গবের সহিত তাহার অনুরোধ রক্ষা করিতাম। তখন ইংরাজি সাহিত্যের মহিমায় উক্তজবল হইয়া উঠিয়া আমার সন্ত্রীর প্রতিভাকে কি লান করি নাই । সন্ত্রীলোকের কমনীয়তার পক্ষে এই একটা ছায়ার আচ্ছাদন দরকার, বাবা এবং বন্ধবান্ধবেরা তাহা বুঝিতেন না— কাজেই আমাকে এই কঠোর কতব্যের ভার লইতে হইয়াছিল। নিশীথের চন্দ্র মধ্যাহ্নের সষের মতো হইয়া উঠিলে দুই দণ্ড বাহবা দেওয়া চলে, কিন্তু তাহার পরে ভাবিতে হয়, ওটাকে ঢাকা দেওয়া যায় কী উপায়ে। আমার সরীর লেখা বাবা এবং অন্যান্য অনেকে কাগজে ছাপাইতে উদ্যত হইয়াছিলেন। নিঝরিণী তাহাতে লজ্জাপ্রকাশ করিত— আমি তাহার সে লজা রক্ষা করিয়াছি। কাগজে ছাপিতে দিই নাই, কিন্তু বন্ধবোন্ধবদের মধ্যে প্রচার বন্ধ করিতে পারা গেল না । ইহার কুফল যে কতদর হইতে পারে, কিছুকাল পরে তাহার পরিচয় পাইয়াছিলাম। তখন উকিল হইয়া আলিপরে বাহির হই। একটা উইল-কেস লইয়া বিরদ্ধে পক্ষের সঙ্গে খুব জোরের সহিত লড়িতেছিলাম। উইলটি বাংলায় লেখা। স্বপক্ষের অনকেলে তাহার অর্থ যে কিরপে স্পষ্ট তাহা বিধিমতে প্রমাণ করিতেছিলাম, এমনসময় বিরোধী পক্ষের উকিল উঠিয়া বলিলেন, “আমার বিবান বন্ধ যদি তাঁহার বিদাষী সাঁর কাছে এই উইলটি বকিয়া লইয়া আসিতেন তবে এমন অদ্ভুত ব্যাখ্যা বারা মাতৃভাষাকে ব্যথিত করিয়া তুলিতেন না।” চুলায় আগন ধরাইবার বেলা ফ দিতে দিতে নাকের জলে চোখের জলে হইতে হয়, কিন্তু গহদাহের আগন নেবানোই দায়। লোকের ভালো কথা চাপা থাকে, আর