পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Go O O গল্পগুচ্ছ অনিষ্টকর কথাগুলো মুখে মুখে হনুহঃ শব্দে ব্যাপ্ত হইয়া যায়। এ গল্পটিও সবর প্রচারিত হইল। ভয় হইয়াছিল, পাছে আমার সন্ত্রীর কানে ওঠে। সৌভাগ্যক্রমে ওঠে নাই—অন্তত এ সম্বন্ধে তাহার কাছ হইতে কোনো আলোচনা কখনও শনি নাই। একদিন একটি অপরিচিত ভদ্রলোকের সহিত আমার পরিচয় হইতেই তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনিই কি শ্ৰীমতী নিঝরিণী দেবীর স্বামী।" আমি কহিলাম, “আমি তাঁহার স্বামী কি না, সে কথার জবাব দিতে চাহি না, তবে তিনিই আমার সত্ৰী বটেন।” বাহিরের লোকের কাছে সীর স্বামী বলিয়া খ্যাতিলাভ করা আমি গৌরবের বিষয় বলিয়া জ্ঞান করি না। সেটা ষে গৌরবের বিষয় নহে, সে কথা আমাকে আর-এক ব্যক্তি অনাবশ্যক পষ্ট ভাষায় সমরণ করাইয়া দিয়াছিল। পবেই পাঠকগণ সংবাদ পাইয়াছেন, আমার সীর জাঠতুত বোনের বিবাহ হইয়াছে। তাহার স্বামীটা অত্যন্ত ববীর দািবত। সীর প্রতি তাহার অত্যাচার অসহ্য। আমি এই পাষণ্ডের নিদয়াচরণ লইয়া আত্মীয়সমাজে আলোচনা করিয়াছিলাম, সে কথা অনেক বড়ো হইয়া তাহার কানে উঠিয়াছিল। সে তাহার পর হইতে আমার প্রতি লক্ষ করিয়া সকলের কাছে বলিয়া বেড়াইতেছে যে, নিজের নামে হইতে আরম্ভ করিয়া বশরের নামে পর্যন্ত উত্তম-মধ্যম-অধম অনেকরকম খ্যাতির বিবরণ শাস্ত্রে লিখিয়াছে, কিন্তু নিজের সন্ত্রীর খ্যাতিতে যশস্বী হওয়ার কল্পনা কবির মাথাতেও আসে নাই। এমন-সব কথা লোকের মুখে মুখে চলিতে আরম্ভ করিলে সমর মনে তো দম্ভ জমিতেই পারে। বিশেষত বাবার একটা বদ অভ্যাস ছিল, নিঝরিণীর সামনেই তিনি আমাদের পরস্পরের বাংলাভাষাজ্ঞান লইয়া কৌতুক করিতেন। একদিন তিনি বলিলেন, “হরিশ যে বাংলা চিঠিগুলো লেখে তাহার বানানটা তুমি দেখিয়া দাও-না কেন, বউমা। আমাকে এক চিঠি লিখিয়াছে, তাহাতে সে জগদিন্দ্র লিখিতে দীঘ ঈ বসাইয়াছে।” শনিয়া বাবার বউমা নীরবে একটুখানি সিমতহাস্য করিলেন। আমিও কথাটাকে ঠাট্টা বলিয়া হাসিলাম, কিন্তু এরকম ঠাট্টা ভালো নয়। সত্রীর দশেভর পরিচয় পাইতে আমার দেরি হইল না। পাড়ার ছেলেদের এক ক্লাব আছে; সেখানে একদিন তাহারা এক বিখ্যাত বাংলা-লেখককে বস্তৃতা দিতে রাজি করিয়াছিল। অপর একটি বিখ্যাত লোককে সভাপতিও ঠিক করা হয়; তিনি বস্তৃতার পবরাত্রে অস্বাস্থ্য জানাইয়া ছটি লইলেন। ছেলেরা উপায়ান্তর না দেখিয়া আমাকে আসিয়া ধরিল। আমার প্রতি ছেলেদের এই অহৈতুকী শ্রদ্ধা দেখিয়া আমি কিছর প্রফুল্ল হইয়া উঠিলাম। বলিলাম, “তা বেশ তো, বিষয়টা কী বলো তো।” তাহারা কহিল, “প্রাচীন ও আধুনিক বঙ্গসাহিত্য।” আমি কহিলাম, “বেশ হইবে, দুটোই আমি ঠিক সমান জানি।” পরদিন সভায় যাইবার পাবে জলখাবার এবং কাপড়চোপড়ের জন্য সন্ত্রীকে কিছ: তাড়া দিতে লাগিলাম। নিঝরিণী কহিল, “কেন গো, এত ব্যস্ত কেন— আবার কি পাত্রী দেখিতে যাইতেছ।” আমি কহিলাম, “একবার দেখিয়াই নাকে-কানে খত দিয়াছি; আর নয়।” “তবে এত সাজসজার তাড়া যে।” সন্ত্রীকে সগবে সমস্ত ব্যাপারটা বলিলাম। শনিয়া সে কিছমাত্র উল্লাস প্রকাশ