পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Փd: Հ গল্পগুচ্ছ রাত্রি সে বনের প্রান্তে একই জায়গায় ঘরিয়া ঘরিয়া বেড়াইয়াছে। কাকের দল কা-কা শব্দে গ্রামের দিকে উড়িল। এই শব্দ মৃত্যুঞ্জয়ের কানে ব্যঙ্গপািণ ধিক্কারবাক্যের মতো শনাইল । গণনায় বারবার ভুল আর সেই ভুল সংশোধন করিতে করিতে অবশেষে সন্ন্যাসী সরগের পথ আবিস্কার করিয়াছেন। সরগের মধ্যে মশাল লইয়া তিনি প্রবেশ করিলেন। বাঁধানো ভিত্তির গায়ে স্যংিলা পড়িয়াছে— মাঝে-মাঝে এক-এক জায়গায় জল চুইয়া পড়িতেছে। প্ৰথানে স্থানে কতকগলো ভেক গায়ে গায়ে স্তপোকার হইয়া নিদ্রা দিতেছে। এই পিছল পথ দিয়া কিছদরে যাইতেই সন্ন্যাসী দেখিলেন, সম্মুখে দেয়াল উঠিয়াছে, পথ অবরুদ্ধ। কিছুই বুঝিতে পারিলেন না। দেয়ালের সবত্র লৌহদণ্ড দিয়া সবলে আঘাত করিয়া দেখিলেন, কোথাও ফাঁকা আওয়াজ দিতেছে না, কোথাও রন্ধ নাই, এই পথটার যে এইখানেই শেষ তাহা নিঃসন্দেহ। আবার সেই কাগজ খলিয়া, মাথায় হাত দিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলেন। সে রারি এমনি করিয়া কাটিয়া গেল । পরদিন পনবার গণনা সারিয়া সরঙ্গে প্রবেশ করিলেন। সেদিন গুপ্তসংকেত অনুসরণপবেক একটি বিশেষ স্থান হইতে পাথর খসাইয়া এক শাখাপথ আবিস্কার করিলেন। সেই পথে চলিতে চলিতে আবার এক জায়গায় পথ অবরুদ্ধ হইয়া গেল। অবশেষে পশ্চম রাত্রে সরগের মধ্যে প্রবেশ করিয়া সন্ন্যাসী বলিয়া উঠিলেন, “আজ আমি পথ পাইয়াছি, আজ আর আমার কোনোমতেই ভুল হইবে না।” পথ অত্যন্ত জটিল; তাহার শাখাপ্রশাখার অন্ত নাই— কোথাও এত সংকীর্ণ যে গড়ি মারিয়া যাইতে হয়। বহ যত্নে মশাল ধরিয়া চলিতে চলিতে সন্ন্যাসী একটা গোলাকার ঘরের মতো জায়গায় আসিয়া পৌছিলেন । সেই ঘরের মাঝখানে একটা বহং ইদারা। মশালের আলোকে সন্ন্যাসী তাহার তল দেখিতে পাইলেন না। ঘরের ছাদ হইতে একটা মোটা প্রকাণ্ড লৌহশপথল ইন্দারার মধ্যে নামিয়া গেছে। সন্ন্যাসী প্রাণপণ বলে ঠেলিয়া এই শঙ্খেলটাকে অলপ একটখানি নাড়াইবামার ঠং করিয়া একটা শব্দ ইন্দারার গহবর হইতে উত্থিত হইয়া ঘরময় প্রতিধৰনিত হইতে লাগিল। সন্ন্যাসী উচ্চৈঃস্বরে বলিয়া উঠিলেন, “পাইয়াছি।” যেমন বলা অমনি সেই ঘরের ভাঙা ভিত্তি হইতে একটা পাথর গড়াইয়া পড়িল, আর সেই সঙ্গে আর-একটি কী সচেতন পদার্থ ধপ করিয়া পড়িয়া চীৎকার করিয়া উঠিল। সন্ন্যাসী এই অকস্মাং শব্দে চমকিয়া উঠিতেই তাঁহার হাত হইতে মশাল পড়িয়া নিবিয়া গেল। 속 সন্ন্যাসী জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি কে।” কোনো উত্তর পাইলেন না। তখন অন্ধকারে হাবড়াইতে গিয়া তাঁহার হাতে একটি মানুষের দেহ ঠেকিল। তাছাকে নাড়া দিয়া