পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ぐり গল্পগুচ্ছ অনকেল বলিয়া উঠিলেন, "বলিস কী রে। কোথায় সে।” “আজ্ঞা, আমার কাছেই আছে, আমি পরশব আনিয়া দিব।" w সেদিন রবিবার, কাছারি নাই। প্রাতঃকাল হইতে সত্ৰীপরাষ দুইজন উন্মুখভাবে পথ চাহিয়া বসিয়া আছেন। দশটার সময় ফেলনাকে সঙ্গে লইয়া রাইচরণ আসিয়া উপস্থিত হইল । অনকেলের সত্ৰী কোনো প্রশন কোনো বিচার না করিয়া তাহাকে কোলে বসাইয়া, তাহাকে সপশ করিয়া, তাহার আঘ্ৰাণ লইয়া, অতৃপ্ততনয়নে তাহার মুখ নিরীক্ষণ করিয়া, কাঁদিয়া হাসিয়া ব্যাকুল হইয়া উঠিলেন। বাসতবিক ছেলেটি দেখিতে বেশ– বেশভূষা আকারপ্রকারে দারিদ্র্যের কোনো লক্ষণ নাই। মুখে অত্যন্ত প্রিয়দশন বিনীত সলজ ভাব। দেখিয়া অনকেলের হৃদয়েও সহসা স্নেহ উচ্ছসিত হইয়া উঠিল। তথাপি তিনি অবিচলিত ভাব ধারণ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কোনো প্রমাণ আছে ?” রাইচরণ কহিল, “এমন কাজের প্রমাণ কী করিয়া থাকিবে । আমি যে তোমার ছেলে চুরি করিয়াছিলাম সে কেবল ভগবান জানেন, পৃথিবীতে আর কেহ জানে না।” অনকেল ভাবিয়া সিথর করিলেন যে, ছেলেটিকে পাইবামাত্র তাঁহার সী যেরপে আগ্রহের সহিত তাহাকে আগলাইয়া ধরিয়াছেন এখন প্রমাণসংগ্রহের চেস্টা করা সযক্তি নহে; যেমনই হউক, বিশ্ববাস করাই ভালো। তা ছাড়া, রাইচরণ এমন ছেলেই বা কোথায় পাইবে। এবং বন্ধ ভূত্য তাঁহাকে অকারণে প্রতারণাই বা কেন করবে। ছেলেটির সহিতও কথোপকথন করিয়া জানিলেন যে, সে শিশুকাল হইতে রাইচরণের সহিত আছে এবং রাইচরণকে সে পিতা বলিয়া জানিত, কিন্তু রাইচরণ কখনো তাহার প্রতি পিতার ন্যায় ব্যবহার করে নাই, অনেকটা ভূত্যের ভাব ছিল । অনকেল মন হইতে সন্দেহ দীর করিয়া বলিলেন, “কিন্তু রাইচরণ, তুই আর আমাদের ছায়া মাড়াইতে পাইবি না।” রাইচরণ করজোড়ে গদগদ কন্ঠে বলিল, "প্রভু, বন্ধবয়সে কোথায় যাইব ।” কত্রী বলিলেন, “আহা, থাক। আমার বাছার কল্যাণ হউক। ওকে আমি মাপ করিলাম।” ন্যায়পরায়ণ অনকেল কহিলেন, "যে কাজ করিয়াছে উহাকে মাপ করা যায় না।” রাইচরণ অনকেলের পা জড়াইয়া কহিল, “আমি করি নাই, ঈশ্বর করিয়াছেন।” নিজের পাপ ঈশ্বরের কন্ধে চাপাইবার চেষ্টা দেখিয়া তনকেল আরও বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “যে এমন বিশ্বাসঘাতকতার কাজ করিয়াছে তাহাকে আর বিশ্বাস করা কতব্য নয় ।” রাইচরণ প্রভুর পা ছাড়িয়া কহিল, “সে আমি নয়, প্রভু।” “তবে কে।” “আমার আদষ্ট।” কিন্তু এরাপ কৈফিয়তে কোনো শিক্ষিত লোকের সন্তোষ হইতে পারে না। রাইচরণ বলিল, “পথিবীতে আমার আর কেহ নাই।” ফেলনা যখন দেখিল, সে মাসেফের সন্তান, রাইচরণ তাহাকে এতদিন চুরি করিয়া নিজের ছেলে বলিয়া অপমানিত করিয়াছে, তখন তাহার মনে মনে কিছ রাগ