পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গুপ্তধন &&షి লোকে গ্রামে গ্রামান্তরে চলিয়াছে। ধরণীর উপরিতলে এই বিচিত্র বহৎ চিরচঞ্চল জীবনযাত্রার মধ্যে তুচ্ছতম দীনতম হইয়া নিজের জীবন মিশাইবার জন্য শতস্তর মাত্তিকা ভেদ করিয়া তাহার কাছে লোকালয়ের আহবান আসিয়া পৌছিতে লাগিল। সেই জীবন, সেই আকাশ, সেই আলোক, পথিবীর সমস্ত মণিমাণিক্যের চেয়ে তাহার কাছে দমাল্য বোধ হইতে লাগিল। তাহার মনে হইতে লাগিল, কেবল ক্ষণকালের জন্য একবার যদি আমার সেই শ্যামা জননী ধরিত্রীর ধালিক্লোড়ে, সেই উন্মত আলোকিত নীলাবরের তলে, সেই তৃণপত্রের গন্ধ-বাসিত বাতাস ব্যক ভরিয়া একটিমাত্র শেষ নিশবাসে গ্রহণ করিয়া মরিতে পারি তাহা হইলেও জীবন সাথক হয়।’ এমন সময় বার খলিয়া গেল। সন্ন্যাসী ঘরে প্রবেশ করিয়া কহিলেন, “মৃত্যুঞ্জয়, কী চাও।” সে বলিয়া উঠিল, “আমি আর কিছুই চাই না— আমি এই সরেঙ্গ হইতে, অন্ধকার হইতে, গোলকধাঁধা হইতে, এই সোনার গারদ হইতে বাহির হইতে চাই । আমি আলোক চাই, আকাশ চাই, মুক্তি চাই।” সন্ন্যাসী কহিলেন, “এই সোনার ভাণ্ডারের চেয়ে মল্যেবান রত্নভাণ্ডার এখানে আছে । একবার যাইবে না ?” মৃত্যুঞ্জয কহিল, "না, যাইব না।” সন্ন্যাসী কহিলেন, "একবার দেখিয়া আসিবার কৌতুহলও নাই ?” মৃত্যুঞ্জয় কহিল, "না, আমি দেখিতেও চাই না। আমাকে যদি কোঁপীন পরিয়া ভিক্ষা করিয়া বেড়াইতে হয় তব আমি এখানে এক মহতও কাটাইতে ইচ্ছা করি না।” সন্ন্যাসী কহিলেন, “আচ্ছা, তবে এসো।” মৃত্যুঞ্জয়ের হাত ধরিয়া সন্ন্যাসী তাহাকে সেই গভীর কাপের সম্মখে লইয়া গেলেন। তাহার হাতে সেই লিখনপত্ৰ দিয়া কহিলেন, “এখানি লইয়া তুমি কী করবে।” মৃত্যুঞ্জয় সে পত্ৰখানি টুকরা টুকরা করিয়া ছিড়িয়া কপের মধ্যে নিক্ষেপ করিল। কাতিক ১৩১১