পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

☾ ᏔᏱ8 গল্পগুচ্ছ বেণ রতিকাতের আদরের আকর্ষণ জোর করিয়া ছাড়াইয়া লইয়া কহিল, “যাও।” রতিকান্তকে বেণ কোনোমতেই সহ্য করিতে পারিত না, কিন্তু রতিও বেণর এই অসহিষ্ণতাকে তাহার বাল্যমাধষের একটা লক্ষণ বলিয়া ইহাতে খাব আমোদ পাইবার চেষ্টা করিত, এবং তাহাকে সোনাবাব চাঁদবাব বলিয়া খেপাইয়া আগন করিয়া তুলিত। হরলালের উমেদারি সফল হওয়া শক্ত হইয়া উঠিয়াছিল; সে মনে-মনে ভাবিতেছিল, এইবার কোনো সুযোগে চৌকি হইতে উঠিয়া বাহির হইতে পারিলে বাঁচা যায়। এমন সময়ে অধরলালের সহসা মনে হইল, এই ছোকরাটিকে নিতান্ত সামান্য মাহিনা দিলেও পাওয়া যাইবে । শেষকালে সিথর হইল, হরলাল বাড়িতে থাকিবে, খাইবে, ও পাঁচ টাকা করিয়া বেতন পাইবে। বাড়িতে রাখিয়া যেটুকু অতিরিন্ত দাক্ষিণা প্রকাশ করা হইবে তাহার বদলে অতিরিক্ত কাজ আদায় করিয়া লইলেই এটুকু দয়া সাথক হইতে পারবে। ෆ এবারে মাস্টার টিকিয়া গেল। প্রথম হইতেই হরলালের সঙ্গে বেণর এমনি জমিয়া গেল যেন তাহারা দই ভাই। কলিকাতায় হরলালের আত্মীয়বন্ধ কেহই ছিল না— এই সন্দের ছোটো ছেলেটি তাহার সমস্ত হাদয় জড়িষা বসিল । অভাগা হরলালের এমন করিয়া কোনো মানুষকে ভালোবাসিবার সুযোগ ইতিপবে কখনও ঘটে নাই। কী করিলে তাহার অবস্থা ভালো হইবে, এই আশায় সে বহন কন্টে বই জোগাড় করিয়া কেবলমাত্র নিজের চেষ্টায় দিনরাত শধে পড়া করিয়াছে। মাকে পরাধীন থাকিতে হইয়াছিল বলিয়া ছেলের শিশুবয়স কেবল সংকোচেই কাটিয়াছে— নিষেধের গণ্ডি পার হইয়া দন্টামির বারা নিজের বাল্যপ্রতাপকে জয়শালী করিবার সখ সে কোনোদিন পায় নাই। সে কাহারও দলে ছিল না, সে আপনার ছোড়া বই ও ভাঙা লেটের মাঝখানে একলাই ছিল। জগতে জমিয়া যে ছেলেকে শিশুকালেই নিস্তৰ ভালোমানুষ হইতে হয়, তখন হইতেই মাতার দুঃখ ও নিজের অবস্থা যাহাকে সাবধানে বঝিয়া চলিতে হয়, সম্পণে অবিবেচক হইবার স্বাধীনতা যাহাব ভাগ্যে কোনোদিন জোটে না, আমোদ করিয়া চঞ্চলতা করা বা দুঃখ পাইয়া কাঁদা, এ দটোই যাহাকে অন্য লোকের অসুবিধা ও বিরক্তির ভয়ে সমস্ত শিশশক্তি প্রয়োগ করিয়া চাপিয়া যাইতে হয়, তাহার মতো কর্ণার পাত্র অথচ কর্ণা হইতে বঞ্চিত জগতে কে আছে! সেই পথিবীর সকল মানুষের নীচে চাপা-পড়া হরলাল নিজেও জানিত না, তাহার মনের মধ্যে এত স্নেহের রস অবসবের অপেক্ষায় এমন করিয়া জমা হইয়া ছিল। বেণর সঙ্গে খেলা করিয়া, তাহাকে পড়াইয়া, অসখের সময় তাহার সেবা করিয়া হরলাল পষ্ট বঝিতে পারিল নিজের অবস্থার উন্নতি করার চেয়েও মানুষের আর কেপ ও হরলালকে পাইয়া বাঁচল। কারণ, ঘরে সে একটি ছেলে; একটি অতি ছোটো ও আর-একটি তিন বছরের বোন আছে—বেশ তাহাদিগকে সঙ্গদানের যোগাই মনে করে না। পাড়ার সমবয়সী ছেলের অভাব নাই, কিন্তু অষরলাল নিজের ঘরকে অত্যন্ত বড়ো ঘর বলিয়া নিজের মনে নিশ্চয় স্থির করিয়া রাখাতে মেলামেশা করিবার