পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6 & 8 গল্পগুচ্ছ হরলাল কহিল, “অধরবাব কি যাইতে দিবেন।” বেণ কহিল, “আমি চলিয়া গেলে তিনি বাঁচেন। কিন্তু টাকার উপরে যেরকম মায়া, বিলাতের খরচ তাঁহার কাছ হইতে সহজে আদায় হইবে না। একটা কৌশল করিতে হইবে।” হরলাল বেণর বিজ্ঞতা দেখিয়া হাসিয়া কহিল, "কী কৌশল।" বেণ কহিল, “আমি হ্যাণ্ডনোটে টাকা ধার করিব। পাওনাদার আমার নামে নালিশ করিলে বাবা তখন দায়ে পড়িয়া শোধ করিবেন। সেই টাকায় পালাইয়া বিলাত যাইব । সেখানে গেলে তিনি খরচ না দিয়া থাকিতে পাবিবেন না।" হরলাল কহিল, “তোমাকে টাকা ধার দিবে কে ।” বেণ কহিল, “আপনি পারেন না ?” হরলাল আশ্চর্য হইয়া কহিল, “আমি " তাহার মুখে আর কোনো কথা বাহির হইল না । বেণ কহিল, "কেন, আপনার দাবায়ান তো তাড়ায় করিযা অনেক টাকা ঘবে আনিল ।” হরলাল হাসিয়া কহিল, “সে দরোয়ানও যেমন আমার, টাকাও তেমনি ।” বলিয়া এই আপিসেব টাকার ব্যবহারটা কী তাহা বেণুকে বুঝাইয়া দিল । এই টাকা কেবল একটি রাত্রের জন্যই দরিদ্রের ঘবে আশ্রয় লয়, প্রভাত হইলে দশ দিকেতে গমন করে । বেণ কহিল, “আপনাদের সাহেব আমাকে ধার দিতে পারেন না । নাহয় আমি সদে বেশি করিয়া দিব।” হরলাল কহিল, “তোমার বাপ যদি সিকিউরিটি দেন তাহা হইলে আমার অনুরোধে হয়তো দিতেও পারেন।” বেণ কহিল, “বাবা যদি সিকিউরিটি দিবেন তো টাকা দিবেন না কেন ।” তকটা এইখানেই মিটিয়া গেল। হরলাল মনে-মনে ভাবিতে লাগিল, “আমার যদি কিছু থাকিত, তবে বাড়িঘর জমিজমা সমস্ত বেচিযা-কিনিয়া টাকা দিতাম। কিন্তু একটিমাত্র অসুবিধা এই যে, বাড়িঘর জমিজমা কিছুই নাই । SO একদিন শুক্লবার রাত্রে হরলালের বাসার সম্মুখে জড়িগড়ি দাঁড়াইল । বেণ গাড়ি হইতে নামিবামার হরলালের আপিসের দরোয়ান তাহাকে মন্ত একট; সেলাম করিয়া উপরে বাবকে শশব্যস্ত হইয়া সংবাদ দিতে গেল। হরলাল তখন তাহার শোবার ঘরে মেজের উপর বসিয়া টাকা মিলাইয়া লইতেছিল। বেণ সেই ঘরেই প্রবেশ করিল। আজ তাহার বেশ কিছু নতন ধরনের। শৌখিন ধতিচাদরের বদলে নধর শরীরে পাশি কোট ও প্যাপ্টলন অটিয়া মাথায় ক্যাপ পরিয়া আসিয়াছে। তাহার দই হাতের আঙলে মণিমন্তোর আংটি ঝকমক করিতেছে। গলা হইতে লভিবত মোটা সোনার চেনে আবদ্ধ ঘড়ি বকের পকেটে নিবিষ্ট ! কোটের আঙ্গিতনের ভিতর হইতে জামার হাতায় হীরার বোতাম দেখা যাইতেছে ।