পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8bf গল্পগুচ্ছ সম্পত্তি-সমপণ প্রথম পরিচ্ছেদ বন্দাবন কুণ্ড মহা কন্ধ হইয়া আসিয়া তাহার বাপকে কহিল, “আমি এখনই চলিলাম।” বাপ যজ্ঞনাথ কুণ্ড কহিলেন, “বেটা অকৃতজ্ঞ, ছেলেবেলা হইতে তোকে খাওয়াইতে পরাইতে যে ব্যয় হইয়াছে তাহা পরিশোধ করিবার নাম নাই, আবার তেজ দেখো-না।” যজ্ঞনাথের ঘরে যেরপে অশনবসনের প্রথা, তাহাতে খাব যে বেশি ব্যয় হইয়াছে তাহা নহে। প্রাচীনকালের ঋষিরা আহার এবং পরিচ্ছদ সম্বন্ধে অসম্ভব অলপ খরচে জীবন নিবাহ করিতেন; যজ্ঞনাথের ব্যবহারে প্রকাশ পাইত, বেশভূষা-আহারবিহাবে তাহারও সেইরুপ অত্যুচ্চ আদশ ছিল। সম্পণে সিদ্ধিলাভ কবিতে পাবেন নাই, সে কতকটা আধুনিক সমাজের দোষে এবং কতকটা শরীররক্ষা সম্বন্ধে প্রকৃতির কতকগলি অন্যায় নিয়মের অনুরোধে। ছেলে যতদিন অবিবাহিত ছিল সহিসছিল, কিন্তু বিবাহের পর হইতে খাওয়া-পরা সম্বন্ধে বাপের অত্যন্ত বিশুদ্ধ আদশের সহিত ছেলের আদশের অনৈক্য হইতে লাগিল। দেখা গেল, ছেলের আদশ ক্রমশই আধ্যাত্মিকের চেয়ে বেশি আধিভৌতিকের দিকে যাইতেছে। শীতগ্রীষ্ম-ক্ষুধাতৃষ্ণা-কাতর পাথিবি সমাজের অনুকরণে কাপড়ের বহর এবং আহারের পরিমাণ উত্তরোত্তর বাড়িয়া উঠিতেছে। এ সম্বন্ধে পিতাপত্রে প্রায় বচসা হইতে লাগিল। অবশেষে বন্দোবনের সতীর গরতের পীড়াকালে কবিরাজ বহনব্যয়সাধ্য এক ঔষধের ব্যবস্থা করাতে, যজ্ঞনাথ তাহাতেই কবিরাজের অনভিজ্ঞতার পরিচয় পাইযা তৎক্ষণাৎ তাহাকে বিদায় করিয়া দিলেন। বন্দাবন প্রথমে হাতে পায়ে ধরিল, তার পরে রাগারা'গ করিল কিন্তু কোনো ফল হইল না। পত্নীর মৃত্যু হইলে বাপকে সীহত্যাকারী বলিয গালি দিল । বাপ বলিলেন, "কেন, ঔষধ খাইয়া কেহ মরে না : দামী ঔষধ খাইলেই যদি বচিত তবে রাজাবাদশারা মরে কোন দুঃখে । যেমন করিয়া তোর মা মরিয়াছে, তোর দিদিমা মরিয়াছে, তোর স্ত্রী তাহার চেয়ে কি বেশি ধম করিয়া মরিবে।” বাসতবিক, যদি শোকে অন্ধ না হইয়া বন্দোবন স্থিরচিত্তে বিবেচনা করিয়া দেখিত, তাহা হইলে এ কথায় অনেকটা সান্তুনা পাইত । তাহাব মা দিদিমা কেহই মরিবার সময় ঔষধ খান নাই। এ বাড়ির এইরুপ সনাতন প্রথা। কিন্তু আধুনিক লোকেরা প্রাচীন নিয়মে মরিতেও চাষ না। যে সময়ের কথা বলিতেছি তখন এ দেশে ইংরাজের নতন সমাগম হইয়াছে, কিন্তু সে সময়েও তখনকার-সেকালের লোক তখনকার-একালের লোকের ব্যবহার দেখিয়া হতবুধি হইযা অধিক করিয়া তামাক টানিত । যাহা হউক, তখনকার-নব্য বন্দোবন তখনকার-প্রাচীন যজ্ঞনাথের সহিত বিবাদ कद्रिक्षा कठ्ठिळा, “ठाशि काळठनाश ।” বাপ তাহাকে তৎক্ষণাৎ যাইতে অনুমতি করিয়া সবসমক্ষে কহিলেন, বান্দাবনকে যদি তিনি কখনো এক পয়সা দেন তবে তাহা গোরক্তপাতের সহিত গণ্য হইবে। বন্দাবনও সবসমক্ষে যজ্ঞনাথের ধনগ্রহণ মাতৃরক্তপাতের তুল্য পাতক বলিয়া স্বীকার