পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

0 ガS গল্পগুচ্ছ রাসমণির ছেলে কালীপদর মা ছিলেন রাসমণি— কিন্তু তাঁহাকে দয়ে পড়িয়া বাপের পদ গ্রহণ করিতে হইয়াছিল। কারণ বাপ মা উভয়েই মা হইয়া উঠিলে ছেলের পক্ষে সুবিধা হয় না। তাহার স্বামী ভবানীচরণ ছেলেকে একেবারেই শাসন করিতে পারেন না | তিনি কেন এত বেশি আদর দেন তাহা জিজ্ঞাসা করিলে তিনি যে উত্তর দিয়া থাকেন তাহা বুঝিতে হইলে পব-ইতিহাস জানা চাই । ব্যাপারখানা এই— শানিয়াড়ির বিখ্যাত বনিয়াদী ধনীর বংশে ভবানীচরণের জন্ম । ভবানীচরণের পিতা অভয়াচরণের প্রথম পক্ষের পত্র শ্যামাচরণ। অধিক বয়সে পীবিয়োগের পর দ্বিতীয়বার যখন অভয়াচরণ বিবাহ করেন তখন তাঁহার বশীর আলন্দি তালকটি বিশেষ করিয়া তাঁহার কন্যার নামে লিখাইয়া লইয়াছিলেন। জামাতার বয়স হিসাব করিয়া তিনি মনে মনে ভাবিয়াছিলেন যে, কন্যার বৈধব্য যদি ঘটে তবে খাওয়াপরার জন্য যেন সপত্নীপত্রের অধীন তাঁহাকে না হইতে হয় । তিনি যাহা কলপনা করিযাছিলেন তাহার প্রথম অংশ ফলিতে বিলম্ব হইল না। তাঁহার দৌহিত্র ভবানীচরণের জন্মের অনতিকাল পরেই তাঁহার জমা হল মৃত্যু হইল । তাঁহার কন্যা নিজের বিশেষ সম্পত্তিটির অধিকার লাভ করিলেন ইহা সবচক্ষে দেখিয়া তিনিও পরলোকযাত্রার সময় কন্যার ইহলোক সম্প্রবন্ধে অনেকটা নিশিচন্ত হইয়া গেলেন। শ্যামাচরণ তখন বয়ঃপ্রাপত। এমন কি, তাঁহার বড়ো ছেলেটি তখনই ভপানীর চেয়ে এক বছরের বড়ো। শ্যামাচরণ নিজের ছেলেদের সঙ্গে একত্রেই ভবানীকে মানুষ করিতে লাগিলেন। ভবানীচরণের মাতার সম্পত্তি হইতে কখনো তিনি নিক্তে এক পয়সা লন নাই এবং বৎসরে বৎসরে তাহার পরিস্কার হিসাবটি তিনি বিমাতার নিকট দাখিল করিয়া তাহার রসিদ লইয়াছেন, ইহা দেখিয়া সকলেই তাঁহার সাধতোষ মন্ধে হইয়াছে। বস্তুত প্রায় সকলেই মনে করিয়াছিল, এতটা সাধতো অনাবশ্যক, এমন-কি ইহা নিবন্ধিতারই নামান্তর। অখণ্ড পৈতৃক সম্পত্তির একটা অংশ দ্বিতীয় পক্ষের মীর হাতে পড়ে, ইহা গ্রামের লোকের কাহারও ভালো লাগে নাই। যদি শ্যামাচরণ স্থল করিয়া এই দলিলটি কোনো কৌশলে বাতিল করিয়া দিতেন তবে প্রতিবেশীবা তাঁহার পৌরষের প্রশংসাই করিত, এবং যে উপায়ে তাহা সচারচরপে সাধিত হইতে পারে তাহার পরামর্শদাতা প্রবীণ ব্যক্তিরও অভাব ছিল না। কিন্তু, শ্যামাচরণ তাঁহাদের চিরকালীন পারিবারিক স্বত্বকে অঙ্গহীন করিয়াও তাঁহার বিমাতার সম্পত্তিটিকে সম্পণে স্বতন্ত্র করিয়া রাখলেন । এই কারণে এবং স্বভাবসিন্ধ স্নেহশীলতাবশত বিমাতা ব্রজসুন্দরী শ্যামাচরণকে আপনার পত্রের মতোই স্নেহ এবং বিশ্বাস করিতেন। এবং তাঁহার সম্পত্তিটিকে শ্যামা করিয়াছেন: বলিয়াছেন, "বাবা, এ তো সমস্তই তোমাদেব, এ সম্পত্তি সঙ্গে লইয়া আমি তো সবগে যাইব না, এ তোমাদেরই থাকিবে ; আমার এত হিসাবপন্ন দেখিলার দরকার কী।” শ্যামাচরণ সে কথায় কর্ণপাত করিতেন না।