পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাসমণির ছেলে &b ఏ আশ্রিতের কাছ হইতে কাজ আদায় করা হয় তবে সে তো চাকরি করাইয়া লওয়া— তাহাতে আশ্রয়দানের মলাই চলিয়া যায়— চৌধুরীদের ঘরে এমন নিয়মই নহে । অতএব সমস্ত দায় রাসমণিরই উপর। দিনরারি নানা কৌশলে ও পরিশ্রমে এই পরিবারের সমস্ত অভাব তাঁহাকে গোপনে মিটাইয়া চলিতে হয় । এমন করিয়া দিনরারি দৈন্যের সঙ্গে সংগ্রাম করিয়া, টানাটানি করিয়া, দরদস্তুর করিয়া চলিতে থাকিলে মানুষকে বড়ো কঠিন করিয়া তুলে— তাহার কমনীয়তা চলিয়া যায়। বাহাদের জন্য সে পদে পদে খাটিয়া মরে তাহারাই তাহাকে সহ্য করিতে পারে না। রাসমণি যে কেবল পাৰ্যশালায় অন্ন পাক করেন তাহা নহে, অল্লের সংস্থানভারও অনেকটা তাহার উপর— অথচ সেই অন্ন সেবন করিয়া মধ্যাহ্নে যাঁহারা নিদ্রা দেন তাঁহারা প্রতিদিন সেই অন্নেরও নিন্দা করেন, অন্নদাতারও সখ্যাতি করেন না। কেবল ঘরের কাজ নহে, তালক ব্রহমন্ত্র অপেস্বল্প যা-কিছু এখনও বাকি আছে তাহার হিসাবপত্র দেখা, খাজনা-আদায়ের ব্যবস্থা করা, সমস্ত রাসমণিকে করিতে হয় । তহশিল প্রভৃতি সম্বন্ধে পাবে এত কষাকষি কোনোদিন ছিল না— ভবানীচরণের টাকা অভিমনার ঠিক উন্টো, সে বাহির হইতেই জানে, প্রবেশ করিবার বিদ্যা তাহার জানা নাই । কোনোদিন টাকার জন্য কাহাকেও তাগিদ করিতে তিনি একেবারেই অক্ষম । রাসমণি নিজের প্রাপ্য সম্বন্ধে কাহাকেও সিকি পয়সা রেয়াত করেন না । ইহাতে প্রজারা তাঁহাকে নিন্দা করে, গোমস্তাগুলো পৰ্যন্ত তাঁহার সতকতার জবালায় অস্থির হইয়া তাঁহার বংশোচিত ক্ষমাদ্রাশয়তার উল্লেখ করিয়া তাঁহাকে গালি দিতে ছাড়ে না। এমন-কি, তাঁহার স্বামীও তাঁহার কৃপণতা ও তাঁহার ককশতাকে তাঁহাদের বিশ্ববিখ্যাত পরিবারের পক্ষে মানহানিজনক বলিয়া কখনো কখনো মদস্বেরে আপত্তি করিয়া থাকেন। এ-সমস্ত নিন্দা ও ভৎসনা তিনি সম্পণে উপেক্ষা করিয়া নিজের নিয়মে কাজ করিয়া চলেন, দোষ সমস্তই নিজের ঘাড়ে লন : তিনি গরিবের ঘরের মেয়ে, তিনি বড়োমানুষিয়ানার কিছুই বোঝেন না, এই কথা বারবার স্বীকার করিয়া, ঘরে বাহিরে সকল লোকের কাছে অপ্রিয় হইয়া, অচিলের প্রান্তটা কষিয়া কোমরে জড়াইয়া, ঝড়ের বেগে কাজ করিতে থাকেন : কেহ তাঁহাকে বাধা দিতে সাহস করে না। এই ভয় সবাদা ছিল পাছে ভবানীচরণ সহসা কতৃত্ব করিয়া কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করিয়া বসেন। তোমাকে কিছুই ভাবিতে হইবে না, এ-সব কিছুতে তোমার থাকার প্রয়োজন নাই এই বলিয়া সকল বিষয়েই স্বামীকে নিরদাম করিয়া রাখাই তাঁহার একটা প্রধান চেষ্টা ছিল। স্বামীরও আজন্মকাল সেটা সন্দেররাপ অভ্যস্ত থাকতে, সে বিষয়ে স্মীকে অধিক দুঃখ পাইতে হয় নাই। রাসমণির অনেক বয়স পর্যন্ত সন্তান হয় নাই--- এই তাঁহার অকমণা সরলপ্রকৃতি পরমখোপেক্ষী বামটিকে লইয়া তাঁহার পত্নীপ্রেম ও মাতৃস্নেহ দুই মিটিয়াছিল। ভবানীকে তিনি বয়ঃপ্রাপ্ত বালক বলিয়াই দেখিতেন। কাজেই শাশুড়ির মৃত্যুর পর হইতে বাড়ির কতা এবং গতিশী উভয়েরই কাজ তাঁহাকে একলাই সম্পন্ন করিতে হইত। গরষ্ঠাকুরের ছেলে এবং অন্যান্য বিপদ হইতে স্বামীকে রক্ষা করিবার জন্য তিনি এমনি কঠোরভাবে চলিতেন যে, তাঁহার স্বামীর সঙ্গীরা তাঁহাকে ভারি ভয় করিত। প্রখরতা গোপন করিয়া রাখবেন, পাট কথাগলার ধারটুকু একট নরম করিয়া দিবেন, এবং পরষমণ্ডলীর সঙ্গে যথোচিত