পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

G为O 醫 গল্পগুচ্ছ সংকোচ রক্ষা করিয়া চলিবেন, সেই নারীজনোচিত সুযোগ তাঁহার ঘটিল না। এ-পর্যন্ত ভবানীচরণ তাঁহার বাধ্যভাবেই চলিতেছিলেন। কিন্তু, কালীপদর সম্মবন্ধে রাসমণিকে মানিয়া চলা তাঁহার পক্ষে কঠিন হইয়া উঠিল। তাহার কারণ এই রাসমণি ভবানীর পত্রটিকে ভবানীচরণের নজরে দেখিতেন না। তাঁহার স্বামীর সবন্ধে তিনি ভাবিতেন, ‘বেচারা করিবে কী, উহার দোষ কী, ও বড়োমানুষের ঘরে জমিয়াছে— ওর তো উপায় নাই।' এইজন্য, তাঁহার স্বামী যে কোনোরাপ কষ্ট স্বীকার করিবেন, ইহা তিনি আশাই করিতে পারিতেন না। তাই সহস্ৰ অভাবসত্ত্বেও প্রাণপণ শক্তিতে তিনি স্বামীর সমস্ত অভ্যস্ত প্রয়োজন যথাসম্ভব জোগাইয়া দিতেন। তাঁহার ঘরে বাহিরের লোকের সম্বন্ধে হিসাব খুবই কষা ছিল, কিন্তু ভবানীচরণের আহারে ব্যবহারে পারতপক্ষে সাবেক নিয়মের কিছমাত্র ব্যত্যয় হইতে পারিত না। নিতান্ত টানাটানির দিনে যদি কোনো বিষয়ে কিছু ক্ৰটি ঘটিত তবে সেটা যে অভাববশত ঘটিয়াছে সে কথা তিনি কোনোমতেই স্বামীকে জানিতে দিতেন না— হয়তো বলিতেন, “ঐ রে, হতভাগা কুকুর খাবারে মুখ দিয়া সমস্ত নষ্ট করিয়া দিয়াছে!” বলিয়া নিজের কল্পিত অসতকতাকে ধিক্কার দিতেন । নয়তো লক্ষীছাড়া নোটোর দোষেই নতন-কেনা কাপড়টা খোওয়া গিয়াছে বলিষা তাহার বৃদ্ধির প্রতি প্রচুর অশ্রদ্ধা প্রকাশ করিতেন— ভবানীচরণ তখন তাঁহার প্রিয় ভৃত্যটির পক্ষাবলম্ববন করিয়া গহিণীর ক্ৰোধ হইতে তাহাকে বাঁচাইবার জন্য ব্যস্ত হইয়া উঠিতেন । এমন-কি, কখনো এমনও ঘটিয়াছে, যে কাপড় গহিণী কেনেন নাই, এবং ভবানীচরণ চক্ষেও দেখেন নাই এবং যে কাল্পনিক কাপড়খানা হারাইয়া ফেলিয়াছে বলিয়া নটবিহারী অভিযন্ত্ত— ভবানীচরণ অম্লানমন্খে স্বীকার করিয়াছেন যে, সেই কাপড় নোটো তাঁহাকে কোঁচাইয়া দিয়াছে, তিনি তাহা পরিযাছেন এবং তাহার পর— তাহার পর কী হইল সেটা হঠাৎ তাঁহার কল্পনাশক্তিতে জোগাইয়া উঠে নাই– রাসমণি নিজেই সেটুকু পরেণ করিয়া বলিয়াছেন– “নিশ্চয়ই তুমি তোমার বাহিরের বৈঠকখানার ঘরে ছাড়িয়া রাখিয়াছিলে, সেখানে যে খুশি আসে যায়, কে চুরি করিয়া লইয়াছে।” ভবানীচরণের সম্ভবন্ধে এইরুপ ব্যবস্থা। কিন্তু, নিজের ছেলেকে তিনি কোনো অংশেই স্বামীর সমকক্ষ বলিয়া গণ্য করিতেন না । সে তো তাঁহারই গভের সন্তান— তাহার আবার কিসের বাবয়ানা ! সে হইবে শক্তসমর্থ কাজের লোক— অনায়াসে দুঃখ সহিবে ও খাটিয়া খাইবে । তাহার এটা নহিলে চলে না, ওটা নহিলে অপমান বোধ হয়, এমন কথা কোনোমতেই শোভা পাইবে না। কালীপদ সম্ববন্ধে রাসমণি খাওয়াপরায় খাব মোটারকমই বরাদ্দ করিয়া দিলেন। মুড়িগড় দিয়াই তাহার জলখাবার সারিলেন এবং মাথা-কান ঢাকিয়া দোলাই পরাইয়া তাহার শীতনিবারলের ব্যবস্থা করিলেন। গরমশায়কে স্বয়ং ডাকিয়া বলিয়া দিলেন, ছেলে যেন পড়াশনায় কিছুমার শৈথিল করিতে না পারে, তাহাকে যেন বিশেষরপে শাসনে সংযত রাখিয়া শিক্ষা দেওয়া হয় । এইখানে বড়ো মুশকিল বাধিল। নিরীহস্বভাব ভবানীচরণ মাঝে মাঝে বিদ্রোহের লক্ষণ প্রকাশ করিতে লাগিলেন, কিন্তু রাসমণি যেন তাহা দেখিয়াও দেখিতে পাইলেন না। ভবানী প্রবল পক্ষের কাছে চিরদিনই হার মানিয়াছেন, এবারেও তাঁহাকে অগত্যা