পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ ふbf গল্পগুচ্ছ জ্যাকেট সংগ্ৰহ করিবার জন্য তাহাঁকে অত্যন্ত বেশি দুশ্চিন্তায় পড়িতে হইত না । শৈলেনের সরোচির উপর সম্পণে নিভর করিয়া সে বলিত, “তোমাকেই কিন্তু ভাই, পছন্দ করিয়া দিতে হইবে।” দোকানে তাহাকে সঙ্গে করিয়া লইয়া নিজে নিতান্ত সস্তা এবং বাজে জিনিস বাছিয়া তুলিত; তখন শৈলেন তাহাকে ভৎসনা করিয়া বলিত, “আরে ছি ছি, তোমার কিরকম পছন্দ।” বলিয়া সব-চেয়ে শৌখিন জিনিসটি টানিয়া তুলিত। দোকানদার আসিয়া বলিত, “হা, ইনি জিনিস চেনেন বটে।” খরিদদার দামের কথা আলোচনা করিয়া মুখ বিমষ করিতেই শৈলেন দাম চুকাইবার অকিঞ্চিৎকর ভারটা নিজেই লইত— অপর পক্ষের ভূয়োভূয়: আপত্তিতেও কর্ণপাত করিত না । এমনি করিয়া, যেখানে শৈলেন ছিল সেখানে সে চারি দিকের সকলেরই সকল বিষয়ে আশ্রয়স্বরুপ হইয়া উঠিয়াছিল। কেহ তাহার আশ্রয় স্বীকার না করিলে তাহার সেই ঔদ্ধত্য সে কোনোমতেই সহ্য করিতে পারিত না । লোকের হিত করিবার শখ তাহার এতই প্রবল । বেচারা কালীপদ নীচের স্যাৎসে’তে ঘরে ময়লা মাদরের উপর বসিয়া, একখানা ছোড়া গেঞ্জি পরিয়া, বইয়ের পাতায় চোখ গজিয়া দলিতে দলিতে পড়া মুখস্থ করিত। যেমন করিয়া হউক তাহাকে স্কলারশিপ পাইতেই হইবে । মা তাহাকে কলিকাতায় আসিবার পুবে মাথার দিব্য দিয়া বলিয়া দিয়াছিলেন, বড়োমানুষের ছেলের সঙ্গে মেশামেশি করিয়া সে যেন আমোদপ্রমোদে মাতিয়া না ওঠে। কেবল মাতার আদেশ বলিয়া নহে, কালীপদকে যে সৈন্য স্বীকার করি ৩ হইয়াছিল তাহা রক্ষা করিয়া বড়োমানুষের ছেলের সঙ্গে মেলা তাহার পক্ষে অসম্ভব ছিল। সে কোনোদিন শৈলেনের কাছে ঘোষে নাই— এবং যদি ও সে জানি ত, শৈলেনেল মন পাইলে তাহার প্রতিদিনের অনেক দর্যহ সমস্যা এক মহেতুতে ই সহজ হই যাইতে পারে, তব কোনো কঠিন সংকটেও তাহার প্রসাদ লাভের প্রতি কালীপপক লোভ আকৃষ্ট হয় নাই। সে আপনার অভাব লইয়া আপনার পারিদ্র্যের নিভৃত অন্ধকারের মধ্যে প্রচ্ছন্ন হইয়া বাস করিত ! গরিব হইয়া তব দরে থাকিবে, শৈলেন এই অহংকারটা কোনোমতেই সহিতে পারিল না। তাহা ছাড়া, আশনে বসনে কালীপদর দারিদ্রাটা এতই প্রকাশ্য যে তাহা নতান্ত দৃষ্টিকট । তাহার অত্যন্ত দীনহীন কাপড়-চোপড় এবং মশারি-বিছান যখনই দোতলার সিড়ি উঠিতে চোখে পড়িত তখনই সেটা যেন একটা অপরাধ বলিয়া মনে বাজিত। ইহার পরে, তাহার গলায় তাবিজ্ঞ ঝুলানো, এবং সে দইসন্ধ্যা যথাবিধি আহ্নিক করিত। তাহার এই-সকল অদভূত গ্রাম্যতা উপরের দলের পক্ষে বিষম হাস্যকর ছিল। শৈলেনের পক্ষের দই-একটি লোক এই নিভৃতবাসী নিরীহ লোকটিব রহস্য উদঘাটন করিবার জন্য দুই-চাবিদিন তাহার ঘরে আনাগোনা করিল। কিন্তু, এই মুখচোরা মানুষের মুখ খলিতে পারিল না। তাহার ঘরে বেশিক্ষণ বসিয থাকা সুখকর নহে, স্বাস্থ্যকর তো নয়ই, কাজেই ভংগ দিতে হইল । তাহাদের পঠিার মাংসের ভোজে এই অকিঞ্চনকে একদিন আহবান করিলে সে নিশ্চয় কৃতাৰ্থ হইবে, এই কথা মনে করিয়া অনুগ্রহ করিয়া একদা নিমন্ত্রণপত্র পাঠানো হইল। কালীপদ জানাইল, ভোজের ভোজ্য সহ করা তাহার সাধ্য নহে, তাহার অভ্যাস