পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(; O গল্পগুচ্ছ তথাপি তাহাকে তিরস্কার করিবেন না। কিন্তু গোকুল ফিরিল না এবং যজ্ঞনাথের বয়স যেন পবোপেক্ষা অনেক শীঘ্র শীঘ্র বাড়িয়া উঠিল এবং শান্য গৃহ প্রতিদিন শুন্যতর হইতে লাগিল । যজ্ঞনাথ আর ঘরে সিথর থাকিতে পারেন না। এমনকি, মধ্যাহ্নে যখন সকল সম্প্রান্ত লোকই আহারান্তে নিদ্রাসখে লাভ করে যজ্ঞনাথ হকা-হতে পাড়ায় পাড়ায় ভ্রমণ করিয়া বেড়ান। তাঁহার এই নীরব মধ্যাহ্নভ্রমণের সময় পথের ছেলেরা খেলা পরিত্যাগপর্বক নিরাপদ পথানে পলায়ন করিয়া তাঁহার মিতব্যয়িতা সম্বন্ধে স্থানীয় কবি -রচিত বিবিধ ছন্দোবদ্ধ রচনা শ্রুতিগম্য উচ্চৈঃস্বরে আবৃত্তি করিত। পাছ আহারের ব্যাঘাত ঘটে বলিয়া তাঁহার পিতৃদত্ত নাম উচ্চারণ করিতে কেহ সাহস করিত না, এইজন্য সকলেই স্বেচ্ছামতে তাঁহার নতন নামকরণ করত। বড়োরা তাঁহাকে ষজ্ঞনাশ বলিতেন, কিন্তু ছেলেরা কেন যে তাঁহাকে চামচিকে বলিয়া ডাকিত তাহার পষ্ট কারণ পাওয়া যায় না। বোধ হয় তাঁহার রক্তহীন শীণ চমের সহিত উক্ত খেচরের কোনোপ্রকার শরীরগত সাদশ্য ছিল। দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ একদিন এইরুপে আমতর ছায়াশীতল গ্রামের পথে যজ্ঞনাথ মধ্যাহ্নে বেড়াইতেছিলেন ; দেখিলেন, একজন অপরিচিত বালক গ্রামের ছেলেদের সদরি হইয়া উঠিয়া একটা সম্পণে নতন উপদ্রবের পন্থা নির্দেশ করিতেছে। অন্যান্য বালকেবা তাহার চরিত্রের বল এবং কল্পনার নতনত্বে অভিভূত হইয়া কায়মনে তাহার বশ মানিয়াছে। অন্য বালকেরা বন্ধকে দেখিয়া যেরপে খেলায় ভংগ দিত, এ তাহা না করিযা চট করিয়া আসিয়া যজ্ঞনাথের গায়ের কাছে চাদর ঝাড়া দিল এবং একটা বন্ধনমন্ত্র গিরগিটি চাদর হইতে লাফাইয়া পড়িয়া তাঁহার গা বাহিয়া অরণ্যভিমুখে পলায়ন করিল— আকস্মিক ত্রাসে বন্ধের সব শরীর কণ্টকিত হইয়া উঠিল। ছেলেদের মধ্যে ভারি একটা আনন্দের কলরব পড়িয়া গেল। আর কিছু দল যাইতে না যাইতে যজ্ঞনাথের স্কন্ধ হইতে হঠাৎ তাঁহার গামছা অদশ্য হইয়া অপরিচিত বালকটির মাথায় পাগড়ির আকার ধারণ করিল। এই অজ্ঞাত মানবকের নিকট হইতে এইপ্রকার নতম প্রণালীর শিষ্টাচার প্রাপ্ত হইয়া যজ্ঞনাথ ভারি সন্তুষ্ট হইলেন। কোনো বালকের নিকট হইতে এরুপ অসংকোচ আত্মীয়তা তিনি বহুদিন পান নাই। বিস্তর ডাকাডাকি করিয়া এবং নানামত আশবাস দিয়া যজ্ঞনাথ তাহাকে কতকটা আয়ত্ত করিয়া লইলেন । জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার নাম কী।” সে বলিল, “নিতাই পাল।” “বাড়ি কোথায়।” “বলিব না !" “বাপের নাম কী ” “বলিব না।” “কেন বলিবে না।”