পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাসমণির ছেলে もO● তাহার মুখের দিকে চাহিয়া রহিল— ভাবিতে লাগিল, ইহার মধ্যে কিছু পরিহাস আছে নাকি। প্রথম কথা তাহার মনে হইল এই যে, পিতাকে তো ইহার হাত হইতে রক্ষা করিতে হইবে। . শৈলেন ফলের পার টেবিলের উপর রাখিয়া পায়ে ধরিয়া কালীপদকে প্রণাম করিল এবং কহিল, “আমি গরতর অপরাধ করিয়াছি, আমাকে মাপ করন।” কালীপদ শশব্যস্ত হইয়া উঠিল। শৈলেনের মুখ দেখিয়াই সে বঝিতে পারিল, তাহার মনে কোনো কপটতা নাই। প্রথম যখন কালীপদ মেসে আসিয়াছিল, এই যৌবনের দাঁতিতে উজ্জল সন্দের মুখশ্ৰী দেখিয়া কতবার তাহার মন অত্যন্ত আকৃষ্ট হইয়াছে, কিন্তু সে আপনার দারিদ্র্যের সংকোচে কোনোদিন ইহার নিকটেও আসে নাই। যদি সে সমকক্ষ লোক হইত, যদি বন্ধর মতো ইহার কাছে আসিবার অধিকার তাহার পক্ষে স্বাভাবিক হইত, তবে সে কত খুশিই হইত— কিন্তু পরপর অত্যন্ত কাছে থাকিলেও মাঝখানে অপার বাবধান লঙ্ঘন করিবার উপায় ছিল না। সিড়ি দিয়া যখন শৈলেন উঠিত বা নামিত তখন তাহার শৌখিন চাদরের সগন্ধ কালীপদর অন্ধকার ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিত— তখন সে পড়া ছাড়িয়া একবার এই হাসাপ্রফুল্ল চিন্তারেখাহীন তরুণ মুখের দিকে না তাকাইয়া থাকিতে পারিত না । সেই মহো ত’ কেবল ক্ষণকালের জন্য তাহার সেই স্যাংসে’তে কোণের ঘরে দরে সৌন্দৰ্যলোকেল ঐশবষ'বিচ্চবিত রশিমচ্ছটা আসিয়া পড়িত। তাহাব পরে সেই শৈলেনের নিদয় তারণ্যে তাহার কাছে কিরুপ সাংঘাতিক হইয়া উঠিয়াছিল তাহা সকলেরই জানা আছে। আজ শৈলেন যখন ফলের পাত্র বিছানায় তাহার সম্মুখে আনিয়া উপস্থিত করিল তখন দীঘনিশ্বাস ফেলিয়। ঐ সন্দের মুখের দিকে কালীপদ আর-একবার তাকাইয়া দেখিল । ক্ষমার কথা সে মুখে কিছুই উচ্চারণ করিল না— আস্তে আস্তে ফল তুলিয়া খাইতে লাগিল— ইহাতেই যাহা বলিবার তাহা বলা হইয়া গেল। " কালীপদ প্রত্যহ আশচষ হইয়া দেখিতে লাগিল, তাহার গ্রাম্য পিতা ভবানীচরণের সঙ্গে শৈলেনের খব ভাল জমিয়া উঠিল। শৈলেন তাঁহাকে ঠাকুরদা বলে, এবং পরপরের মধ্যে অবাধে ঠাট্রাতামাশা চলে। তাহাদের উভয় পক্ষের হাস্যকৌতুকের প্রধান লক্ষ্য ছিলেন অনুপস্থিত ঠাকরনেদিদি। এতকাল পরে এই পরিহাসের দক্ষিণবায়র হিপ্লোলে ভবানীচরণের মনে যেন যৌবনসমতির পলেক সঞ্চার করিতে লাগিল । ঠাকরনেদিদির বহস্তরচিত আচার আমসত্ত্ব প্রভৃতি সমস্তই শৈলেন রোগীর অনবধানতার অবকাশে চুরি করিয়া নিঃশেষে খাইয়া ফেলিয়াছে, এ কথা আজ সে নিলাজভাবে স্বীকার করিল। এই চুরির খবরে কালীপদর মনে বড়ো একটি গভীর আনন্দ হইল। তাহার মায়ের হাতের সামগ্রী সে বিশ্বের লোককে ডাকিয়া খাওয়াইতে চায়, যদি তাহারা ইহার আদর বোঝে। কালীপদর কাছে আজ নিজের রোগের শয্যা আনন্দসভা হইয়া উঠিল—এমন সখে তাহার জীবনে সে অল্পই পাইয়াছে। কেবল ক্ষণে ক্ষণে তাহার মনে হইতে লাগিল, আহা, মা যদি থাকিতেন ! তাহার মা থাকিলে এই কৌতুকপরায়ণ সন্দের যুবকটিকে যে কত স্নেহ করিতেন, সেই কথা সে কল্পনা করিতে লাগিল । তাহাদের র্যগণকক্ষসভায় কেবল একটা আলোচনার বিষয় ছিল যেটাতে আনন্দপ্রবাহে মাঝে মাঝে বড়ো বাধা দিত। কালীপদর মনে যেন দারিদ্রোর একটা অভিমান