পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সম্প্রপত্তি-সমপণ & S. “আমি বাড়ি ছাড়িয়া পলাইয়া আসিয়াছি।” “কেন।” "আমার বাপ আমাকে পাঠশালায় দিতে চায়।” এরুপ ছেলেকে পাঠশালায় দেওয়া যে একটা iনফল অপব্যয় এবং বাপের বিষয়বধিহীনতার পরিচয়, তাহা তৎক্ষণাং যজ্ঞনাথের মনে উদয় হইল। যজ্ঞনাথ বলিলেন, "আমার বাড়িতে আসিয়া থাকিবে ?” বালকটি কোনো আপত্তি না করিয়া এমনই নিঃসংকোচে সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করিল যেন সে একটা পথপ্রান্তবতী তর-তল । কেবল তাহাই নয়, খাওয়া-পরা সম্বন্ধে এমনই অম্বলনিবদনে নিজের অভিপ্রায়মত আদেশ প্রচার করিতে লাগিল, যেন পবোহুেই তাহার পরা দাম চুকাইয়া দিয়াছে। এবং ইহা লইয়া মাঝে মাঝে গহস্বামীর সহিত রীতিমত ঝগড়া করিত। নিজের ছেলেকে পরাস্ত করা সহজ কিন্তু পরের ছেলের কাছে যজ্ঞনাথকে হার মানিতে হইল। তৃতীয় পরিচ্ছেদ যজ্ঞনাথের ঘরে নিতাই পালের এই অভাবনীয় সমাদর দেখিয়া গ্রামের লোক আশ্চয* হইয়া গেল। বঝিল, বন্ধ আর বেশিদিন বাঁচিবে না এবং কোথাকার এই বিদেশী ছেলেটাকেই সমস্ত বিষয় দিয়া যাইবে । বালকের উপর সকলেরই পরম ঈষা উপস্থিত হইল, এবং সকলেই তাহার অনিষ্ট করিবার জন্য কৃতসংকল্প হইল। কিন্তু বন্ধ তাহাকে বকের পাঁজরের মতো ঢাকিয়া বেড়ইত । ছেলেটা মাঝে-মাঝে চলিয়া যাইলে বলিয়া শাসাইত। যজ্ঞনাথ তাহাকে প্রলোভন :দখাইতেন, “ভাই, তোকে আমি আমার সমস্ত বিষয়-আশয় দিয়া যাইব ।” বালকের বয়স অলপ কিন্তু এই আশ্বাসের মর্যাদা সে সপণ বুঝিতে পারিত। তখন গ্রামের লোকের বালকের বাপের সন্ধানে প্রবত্ত হইল। তাহারা সকলেই বলিল, “আহা, বাপ-মার মন না-জানি কত কটেই হইতেছে । ছেলেটাও তো পাপিাঠ কম নয় ।” ললিয়া ছেলেটার উদ্দেশে অকথা উচ্চারণ গালি প্রয়োগ করিত। তাহার এতই বেশি ঝজি যে, ন্যায়বধির উত্তেজনা অপেক্ষা তাহাতে বাথের গারদাহ বেশি ८न.झुठ श्ड़ेड । বন্ধ একদিন এক পথিকের কাছে শুনিতে পাইল, দামোদর পাল বলিয়া এক শক্তি তাহার নিরদিষ্ট পত্রের সন্ধান করিয়া বেড়াইতেছে, অবশেষে এই গ্রামের অভিমুখেই আসিতেছে। নিতাই এই সংবাদ শুনিয়া অস্থির হইয়া উঠিল। ভাবী বিষয়-আশয় সমস্ত ত্যাগ করিয়া পলায়নোদাত হইল। যজ্ঞনাথ নিতাইকে বারবার আশ্বাস দিয়া কহিলেন, “তোমাকে আমি এমন স্থান লকোইয়া রাখিব যে, কেহই খুজিয়া পাইবে না। গ্রামের লোকেরাও না।” বালকের ভারি কৌতুহল হইল: কহিল, “কোথায় দেখাইয়া দাও-না।” যজ্ঞনাথ কহিলেন, “এখন দেখাইতে গেলে প্রকাশ হইয়া পড়িবে। রাত্রে দেখাইব ।”