পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ΦΙσρξία" ఆపి 6; করিয়া বসিয়া পতুল-গড়া দেখিতে ভালোবাসিত এবং প্রয়োজনমতো রসিককে কাদা কাঠি প্রভৃতি অগ্রসর করিয়া দিত। তাহার ভারি ইচ্ছা রসিক তাহাকে একটা-কিছর ফরমাশ করে। কাজ করিতে করিতে রসিক পান চাহিবে জানিয়া সৌরভী তাহা জোগাইয়া দিবার জন্য প্রতিদিন প্রস্তুত হইয়া আসিত। রসিক স্বহস্তের কীতিগুলি তাহার সামনে সাজাইয়া ধরিয়া যখন বলিত "সৈরি, তুই এর কোনটা নিবি বল", তখন সে ইচ্ছা করিলে যেটা খুশি লইতে পারিত, কিন্তু সংকোচে কোনোটাই লইত না; রসিক নিজের পছন্দমতো জিনিসটি তাহাকে তুলিয়া দিত। পর্তুল-গড়ার পব শেষ হইলে যখন হামোনিয়ম বাজাইবার দিন আসিল তখন পাড়ার ছেলেমেয়েরা সকলেই এই যন্ত্রটা টেপাটপি করিবার জন্য ঝ:কিয়া পড়িত, রসিক তাহদের সকলকেই হংকার দিয়া খেদাইয়া রাখিত। সৌরভী কোনো উৎপাত করিত না ; সে তাহার ডুরে শাড়ি পরিয়া, বড়ো বড়ো চোখ মেলিয়া, বাম হাতের উপর শরীরটার ভর দিয়া হেলিয়া বসিয়া, চুপ করিয়া আশ্চর্য হইয়া দেখিত। রসিক ডাকিত, “আয় সৈরি, একবার টিপিয়া দেখা।” সে মদ মদ হাসিত, অগ্রসর হইতে চাহিত না। রসিক অসম্মতিসত্ত্বেও নিজের হাতে তাহার আঙলৈ ধরিয়া তাহাকে দিয়া বাজাইয়া লইত । সৌরভীর দাদা গোপালও রসিকের ভক্তবন্দের মধ্যে একজন অগ্রগণ্য ছিল। সৌরভীর সঙ্গে তাহার প্রভেদ এই যে, ভালো জিনিস লইবার জন্য তাহাকে কোনোদিন সাধিতে হইত না । সে আপনি ফরমাশ করিত এবং না পাইলে অসিথর করিয়া তুলিত । নতনগোছের যাহা-কিছু দেখিত তাহাই সে সংগ্ৰহ করিবার জন্য ব্যস্ত হইয়া উঠিত। রসিক কাহারও আবদার বড়ো সহিতে পারিত না, তব গোপাল যেন অন্য ছেলেদের চেয়ে রসিকের কাছে কিছু বেশি প্রশ্রয় পাইত । বংশী মনে মনে ঠিক করিল, এই সৌরভীর সঙ্গেই রসিকের বিবাহ দিতে হইবে। কিন্তু সৌরভীর ঘর তাহদের চেয়ে বড়ো— পাঁচ-শো টাকার কমে কাজ হইবার আশা নাই । दे এতদিন বংশী কখনো রসিককে তাহার তাঁত-বোনার সাহায্য করিতে অনুরোধ করে নাই । খাটনি সমস্তই সে নিজের ঘাড়ে লইয়াছিল। রসিক নানাপ্রকার বাজে কাজ লইয়া লোকের মনোরঞ্জন করিত, ইহা তাহার দেখিতে ভালোই লাগিত । রসিক ভাবিত, "দাদা কেমন করিয়া যে রোজই এই এক তাঁতের কাজ লইয়া পড়িয়া থাকে কে জানে। আমি হইলে তো মরিয়া গেলেও পারি না।’ তাহার দাদা নিজের সম্প্রবন্ধে নিতান্তই টানাটানি করিয়া চালাইত, ইহাতে সে দাদাকে কৃপণ বলিয়া জানিত। তাহার দাদার সম্বন্ধে রসিকের মনে যথেষ্ট একটা লজ্জা ছিল। শিশুকাল হইতেই সে নিজেকে । তাহার দাদা হইতে সকল বিষয়ে ভিন্ন শ্রেণীর লোক বলিয়াই জানিত। তাহার দাদাই তাহার এই ধারণাকে প্রশ্রয় দিয়া আসিয়াছে। এমন সময়ে বংশী নিজের বিবাহের আশা বিসজন দিয়া রসিকেরই বধ আনিবার জন্য যখন উৎসকে হইল তখন বংশীর মন আর ধৈর্য মানিতে চাহিল না। প্রত্যেক মাসের বিলম্বব তাহার কাছে অসহ্য বোধ হইতে লাগিল। বাজনা বাজিতেছে, আলো