পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পগরক্ষা ৬২১ একবার ডাকিয়া আন তো।” গোপাল ফিরিয়া আসিয়া কহিল, “সৈরি বলিল, তাহাকে এখন বড়ি শকাইতে দিতে হইবে, তাহার সময় নাই।” রসিক মনে মনে হাসিয়া কহিল, “চল দেখি, সে কোথায় বড়ি শকাইতেছে।” রসিক আঙিনার মধ্যে প্রবেশ করিয়া দেখিল, কোথাও বড়ির নামগন্ধ নাই। সৌরভ তাহাদের পায়ের শব্দ পাইয়া আর-কোথাও লুকাইবার উপায় না দেখিয়া তাহাদের দিকে পিঠ করিয়া মাটির প্রাচীরের কোণ ঠেসিয়া দড়িাইল । রসিক তাহার কাছে গিয়া তাহাকে ফিরাইবার চেষ্টা করিয়া বলিল, “রাগ করেছিস সৈরি ?” সে অকিয়া-বকিয়া রসিকের চেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করিয়া দেয়ালের দিকেই মুখ করিয়া রহিল। একদা রসিক আপন খেয়ালে নানা রঙের সতো মিলাইয়া নানা চিত্রবিচিত্র করিয়া একটা কাঁথা শেলাই করিতেছিল। মেয়েরা যে কাঁথা শেলাই করিত তাহার কতকগলো বাঁধা নক্সা ছিল, কিন্তু রসিকের সমস্তই নিজের মনের রচনা। যখন এই শেলাইয়ের ব্যাপার চলিতেছিল তখন সৌরভী আশ্চর্য হইয়া একমনে তাহা দেখিত ; সে মনে করিত, জগতে কোথাও এমন আশ্চৰ্য কাঁথা আজ পর্যন্ত রচিত হয় নাই। প্রায় যখন কাঁথা শেষ হইয়া আসিয়াছে এমন সময়ে রসিকের বিরক্তি বোধ হইল, সে আর শেষ করিল না । ইহাতে সৌরভী মনে ভারি পীড়া বোধ করিয়াছিল, এইটে শেষ করিয়া ফেলিবার জন্য সে রসিককে কতবার যে কত সাননেয় অনুরোধ করিয়াছে তাহার ঠিক নাই। আর ঘণ্টা দুই-তিন বসিলেই শেষ হইয়া যায়, কিন্তু রসিকের যাহাতে গা লাগে না তাহাতে তাহাকে প্রবত্ত করাইতে কে পারে। হঠাৎ এতদিন পরে রসিক কাল রাতি জাগিয়া সেই কাঁথাটি শেষ করিয়াছে । রসিক বলিল, “সৈরি, সেই কাঁথাটা শেষ করিয়াছি, একবার দেখবি না ?” অনেক কটে সৌরভীর মুখ ফিরাইতেই সে অচিল দিয়া মাখ কপিয়া ফেলিল। তখন যে তাহার দুই কপোল বাহিয়া জল পড়িতেছিল, সে জল সে দেখাইবে কেমন করিয়া । সৌরভীর সঙ্গে তাহার পবের সহজ সম্বন্ধ স্থাপন করিতে রসিকের ষথেষ্ট সময় লাগিল। অবশেষে উভয় পক্ষে সন্ধি যখন এতদরে অগ্রসর হইল যে সৌরভী রসিককে পান আনিয়া দিল তখন রসিক সেই কাঁথার আবরণ খালিয়া সেটা আঙিনার উপর মেলিয়া দিল— সৌরভীর হৃদয়টি বিস্ময়ে অভিভূত হইয় গেল। অবশেষে যখন রসিক বলিল, “সৈরি, এ কাঁথা তোর জন্যেই তৈরি করিয়াছি, এটা আমি তোকেই দিলাম", তখন এতবড়ো অভাবনীয় দান কোনোমতেই সৌরভ স্বীকার করিয়া লইতে পারিল না। পথিবীতে সৌরভী কোনো দলেভ জিনিস দাবি করিতে শেখে নাই। গোপাল তাহাকে খাব ধমক দিল। মানুষের মনস্তত্ত্বের সক্ষমতা সম্বন্ধে তাহার কোনো বোধ ছিল না; সে মনে করিল, লোভনীয় জিনিস লইতে লজ্জা একটা নিরবচ্ছিন্ন কপটতামাত্র। গোপাল ব্যথ কালব্যয়-নিবারণের জন্য নিজেই কাঁথাটা ভাঁজ করিয়া লইয়া ঘরের মধ্যে রাখিয়া আসিল। বিচ্ছেদ মিটমাট হইয়া গেল। এখন হইতে আবার পর্বতন প্রণালীতে তাহাদের বন্ধত্বের ইতিহাসের দৈনিক অনবেত্তি চলিতে থাকিবে, দটি বালক-বালিকার মন এই আশায় উৎফুল্ল হইয়া উঠিল। সেদিন পাড়ায় তাহার দলের সকল ছেলেমেয়ের সঙ্গোই রসিক আগেকার মতোই