পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পগরক্ষা もミ○ কাজ করিতে গিয়া দেখিল, বেগারের কাজে আদর পাওয়া যায় এবং সেই আদর সে বরাবর পাইয়াছে, কিন্তু যেখানে গরজের কাজ সেখানে দয়ামায়া নাই। বেগারের কাজে নিজের ইচ্ছা-নামক পদার্থটাকে খুব কবিয়া দৌড় করানো যায়; সেই ইচ্ছার জোরেই সে কাজে এমন অভাবনীয় নৈপুণ্য জাগিয়া উঠিয়া মনকে এত উৎসাহিত করিয়া তোলে। কিন্তু, বেতনের কাজে এই ইচ্ছা একটা বাধা ; এই কাজের তরণীতে অনিশ্চিত ইচ্ছার হাওয়া লাগাইবার জন্য পালের কোনো বন্দোবস্ত নাই, দিনরাত কেবল মজুরের মতো দাঁড় টানা এবং লগি ঠেলা। যখন দশকের মতো দেখিয়াছিল তখন রসিক মনে করিয়াছিল, সাকাসে ভারি মজা। কিন্তু, ভিতরে যখন প্রবেশ করিল মজা তখন সম্পণে বাহির হইয়া গিয়াছে। যাহা আমোদের জিনিস যখন তাহা আমোদ দেয় না, যখন তাহার প্রতিদিনের পনরাবৃত্তি বন্ধ হইলে প্রাণ বাঁচে অথচ তাহা কিছুতেই বন্ধ হইতে চায় না, তখন তাহার মতো অরুচিকর জিনিস আর-কিছুই হইতে পারে না। এই সাকাসের দলের মধ্যে আবদ্ধ হইয়া রসিকের প্রত্যেক দিনই তাহার পক্ষে একান্ত বিসবাদ হইয়া উঠিল । সে প্রায়ই বাড়ির স্বপন দেখে । রাত্রে ঘন্ম হইতে জাগিয়া অন্ধকারে প্রথমটা রসিক মনে করে, সে তাহার দাদার বিছানার কাছে শ্যইয়া আছে ; মহত্যকাল পরেই চমক ভাঙিয়া দেখে, দাদা কাছে নাই। বাড়িতে থাকিতে এক-একদিন শীতের রাত্রে ঘুমের ঘোরে সে অনুভব করিত, দাদা তাহাব শীত করিতেছে মনে করিয়া তাহার গান্তবস্ত্রের উপরে নিজের কাপড়খানা ধীরে ধীরে চাপাইয়া দিতেছে। এখানে পৌষের রাত্রে যখন ঘুমের ঘোরে তাহার শীত-শীত করে তখন দাদা তাহার গাযে ঢাকা দিতে আসিবে মনে করিয়া সে যেন অপেক্ষা করিতে থাকেদেরি হইতেছে দেখিয়া রাগ হয। এমন সময় জাগিষা উঠিয়া মনে পড়ে, দাদা কাছে নাই এবং সেই সঙ্গে ইহাও মনে হয় যে, এই শীতের সময় তাহার গায়ে আপন কাপড়টি টানিয়া দিতে না পারিয়া আজ রাত্রে শনাশয্যার প্রান্তে তাহার দাদার মনে শান্তি নাই। তখনই সেই অধরাত্রে সে মনে করে, ‘কাল সকালে উঠিয়াই আমি ঘরে ফিরিয়া যাইব । কিন্তু, ভালো করিয়া জাগিয়া উঠিযা, আবার সে শৰু করিয়া প্রতিজ্ঞা করে, মনে মনে আপনাকে বারবাব করিয়া জপাইতে থাকে যে, “আমি পণের টাকা ভতি করিয়া বাইসিকলে চড়িয়া বাড়ি ফিরিব, তবে আমি পরষমানুষ, তবে আমার নাম রসিক । একদিন দলের কতা তাহাকে তাঁত বলিয়া বিশ্রী করিয়া গালি দিল। সেইদিন রসিক তাহার সামান্য কয়েকটি কাপড় ঘটি ও থালাবাটি, নিজের ষে-কিছু ঋণ ছিল তাহার পরিবতে' ফেলিয়া রাখিয়া সম্পণে রিক্তহস্তে বাহির হইয়া চলিয়া গেল। সমস্তদিন কিছু খাওয়া হয় নাই। সন্ধার সময় যখন নদীর ধারে দেখিল গোরগলা আরামে চরিয়া খাইতেছে তখন একপ্রকার ঈষার সহিত তাহার মনে হইতে লাগিল, পথিবী যথার্থ এই পশুপক্ষীদের মা—নিজের হাতে তাহাদের মখে আহারের গ্রাস তুলিয়া দেন– আর, মানুষ বুঝি তাঁর কোন সতিনের ছেলে, তাই চারি দিকে এত বড়ো মাঠ ধ ধ করিতেছে, কোথাও রসিকের জন্য একমটি অন্ন নাই। নদীর কিনারায় গিয়া রসিক অঞ্জলি ভরিয়া খাব খানিকটা জল খাইল। এই নদীটির ক্ষুধা নাই, তুফা নাই, কোনো ভাবনা নাই, কোনো চেষ্টা নাই, ঘর নাই তব ঘরের অভাব নাই, সম্মখে অন্ধকার রাত্রি আসিতেছে তব সে নিরন্দবেগে নিরদেশের অভিমুখে