পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পলরক্ষা も、○ উঠিয়াছে। চোখের সামনে সে কেবলই আপনার গ্রামের নানা ছবি দেখিতেছে। অতি তুচ্ছ খুটিনাটিও উজ্জবল হইয়া তাহার মনের সামনে দেখা দিয়া যাইতেছে। পরোহিতের আধ-পাগলা ছেলেটা; তাহাদের প্রতিবেশীর কপিলবণের বাছরেটা; নদীর পথে যাইতে রাস্তার দক্ষিণধারে একটা তাল গাছকে শিকড় দিয়া অটিয়া জড়াইয়া একটা অশথ গাছ দুই কুস্তিগির পালোয়ানের মতো প্যাঁচ কষিয়া দাঁড়াইয়া আছে, তাহারই তলার একটা অনেক দিনের পরিত্যন্ত ভিটা; তাহদের বিলের তিন দিকে আমন ধান, এক পাশে গভীর জলের প্রান্তে মাছ-ধরা জাল বধিবার জন্য বাঁশের খোঁটা পোঁতা, তাহারই উপরে একটি মাছরাঙা চুপ করিয়া বসিয়া; কৈবতপাড়া হইতে সন্ধ্যার পরে মাঠ পার হইয়া কাঁতনের শব্দ আসিতেছে ; ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে নানাপ্রকার মিশ্রিত গন্ধে গ্রামের ছায়াময় পথে স্তব্ধ হাওয়া ভরিয়া রহিয়াছে; আর তারই সঙ্গে মিলিয়া তাহার সেই ভক্তবন্ধর দল, সেই চঞ্চল গোপাল, সেই অচিলের-খটেপান-বাঁধা বড়ো-বড়ো-সিন্ধ-চোখ-মেলা সৌরভী— এই-সমস্ত সমতি, ছবিতে গন্ধে শব্দে, সেনহে প্রীতিতে বেদনায়, তাহার মনকে প্রতিদিন গভীরতর আবিষ্ট করিয়া ধরিতে লাগিল। গ্রামে থাকিতে রসিকের যে নানাপ্রকার কারৈেনপুণ্য প্রকাশ পাইত এখানে তাহা একেবারে বন্ধ হইয়া গেছে, এখানে তাহার কোনো মল্যে নাই; এখানকার দোকান-বাজারের কলের তৈরি জিনিস হাতের চেষ্টাকে লন্জা দিয়া নিরস্ত করে । তাঁতের ইস্কুলে কাজ কাজের বিড়ম্বনামাত্র, তাহাতে মন ভরে না। থিয়েটারের দীপশিখা তাহার চিত্তকে পতঙ্গের মতো মরণের পথে টানিয়াছিল— কেবল টাকা জমাইবাব কঠোর নিষ্ঠা তাহাকে বাঁচাইয়াছে। সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে কেবলমাত্র তাহার গ্রামটিতে যাইবার পথই তাহার কাছে একেবারে রন্ধ। এইজন্যই গ্রামে যাইবার টান প্রতি মহোতে তাহাকে এমন করিয়া পীড়া দিতেছে। তাঁতের ইস্কুলে সে প্রথমটা ভারি ভরসা পাইয়াছিল, কিন্তু আজ যখন সে আশা আর টেকে না, যখন তাহার দই মাসের বেতনই সে আদায় করিতে পারিল না, তখন সে আপনাকে আর ধরিয়া রাখিতে পারে না এমন হইল। সমস্ত লক্ষজা স্বীকার করিয়া, মাথা হে’ট করিয়া, এই এক বৎসর প্রবাসবাসের ব্যহং ব্যথতা বহিয়া দাদার আশ্রয়ে যাইবার জন্য তাহার মনের মধ্যে কেবলই তাগিদ আসিতে লাগিল । যখন মনটা অত্যন্ত যাই-যাই করিতেছে এমন সময় তাহার বাসার কাছে খবে ধম করিয়া একটা বিবাহ হইল। সন্ধ্যাবেলায় বাজনা বাজাইয়া বর আসিল । সেইদিন রান্তে রসিক স্বপন দেখিল, তাহার মাথায় টোপর গায়ে লাল চেলি, কিন্তু সে গ্রামের বাঁশঝাড়ের আড়ালে দাঁড়াইয়া আছে। পাড়ার ছেলেমেয়েরা তোর বর আসিয়াছে’ বলিয়া সৌরভীকে খেপাইতেছে, সৌরভী বিবন্ত হইয়া কদিয়া ফেলিয়াছে— রসিক তাহাদিগকে শাসন করিতে ছটিয়া আসিতে চায়, কিন্তু কেমন করিয়া কেবলই বাঁশের কষ্টিতে তাহার কাপড় জড়াইয়া যায়, ডালে তাহার টোপর আটকায়, কোনোমতেই পথ DBBB BDDD DBB BBB DS DDD DDD DBBB BBB BBB DDD DDD বোধ হইতে লাগিল। বধ তাহার জনা ঠিক করা আছে অথচ সেই বধকে ঘরে আনিবার যোগ্যতা তাহার নাই, এইটেই তাহার কাপরাষতার সব চেয়ে চড়ান্ত পরিচয় বলিয়া মনে হইল। না— এতবড়ো দীনতা স্বীকার করিয়া গ্রামে ফিরিয়া যাওয়া কোনো মতেই হইতে পারে না ।