পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

やミや গল্পগুচ্ছ § অনাবটি যখন চলিতে থাকে তখন দিনের পর দিন কাটিয়া যায় মেঘের আর দেখা নাই, যদি বা মেঘ দেখা দেয় ব্যষ্টি পড়ে না, যদি বা বটি পড়ে তাহাতে মাটি ভেজে না। কিন্তু ব্যষ্টি যখন নামে তখন দিগন্তের এক কোণে যেমনি মেঘ দেখা দেয় অমনি দেখিতে দেখিতে আকাশ ছাইয়া ফেলে এবং অবিরল বৰণে পথিবী ভাসিয়া যাইতে থাকে। রসিকের ভাগ্যে হঠাৎ সেইরকমটা ঘটিল। জানকী নন্দী মস্ত ধনী লোক । সে একদিন কাহার কাছ হইতে কী একটা খবর পাইল; তীতের ইস্কুলের সামনে তাহার জড়ি আসিয়া থামিল, তাঁতের ইস্কুলের মাস্টারের সঙ্গে তাহার দুই-চারটে কথা হইল এবং তাহার পরদিনই রসিক আপনার মেসের বাসা পরিত্যাগ করিয়া নন্দীবাবদের মস্ত তেতালা বাড়ির এক ঘরে আশ্রয় গ্রহণ করিল। নন্দীবাবদের বিলাতের সঙ্গে কমিশন এজেন্সির মস্ত কারবার— সেই কারবারে কেন ষে জানকীবাব: অযাচিতভাবে রসিককে একটা নিতান্ত সামানা কাজে নিযন্তে করিয়া যথেস্ট পরিমাণে বেতন দিতে লাগিলেন তাহা রসিক বুঝিতেই পারিল না । সেরকম কাজের জন্য লোক সন্ধান করিবার দরকারই হয় না, এবং যদি বা লোক জোটে তাহার তো এত অাদর নহে। বাজারে নিজের মলা কত এত দিনে রসিক তাহা বুঝিযা লইয়াছে ; অতএব জানকীবাব যখন তাহাকে ঘরে রাখিয়া যত্ন করিয়া খাওয়াইতে লাগিলেন তখন রসিক তাহার এত অাদরের মলে কারণ সদের আকাশের গ্রহনক্ষত্র ছাড়া আর-কোথাও খ:জিয়া পাইল না। কিন্তু, তাহার শুভগ্রহটি অত্যন্ত দরে ছিল না। তাহার একট সংক্ষিপত বিবরণ বলা আবশ্যক । একদিন জানকীবাবরে অবস্থা এমন ছিল না। তিনি যখন কষ্ট করিয়া কলেক্তে পড়িতেন তখন তাঁহার সতীর্থ হরমোহন বসু ছিলেন তাঁহার পরম বন্ধ। হরমোহন ব্ৰাহম সমাজের লোক। এই কমিশন এজেন্সি হরমোহনদেরই পৈতৃক বাণিজ্য – তাঁহাদের একজন মরবি ইংরেজ সদাগর তাঁহার পিতাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তিনি তাঁহাকে এই কাজে জড়িয়া দিয়াছিলেন। হরমোহন তাঁহার নিঃস্ব বন্ধ জানকীকে এই কাজে টানিয়া লইয়াছিলেন । সেই দরিদ্র অবস্থায় নতন যৌবনে সমাজসংস্কার সম্বন্ধে জানকীর উৎসাহ হরমোহনের চেয়ে কিছমান্ত কম ছিল না। তাই তিনি পিতার মৃত্যুর পরে তাঁহার ভগিনীর বিবাহের সম্প্ৰবন্ধ ভাঙিয়া দিয়া তাহাকে বড়ো বয়স পর্যন্ত লেখাপড়া শিখাইতে প্রবত্ত হইলেন। ইহাতে তাঁহাদের তন্তুবায়সমাজে যখন তাঁহার ভগিনীর বিবাহ অসম্ভব হইয়া উঠিল তখন কায়স্থ হরমোহন নিজে তাঁহাকে এই সংকট হইতে উথার করিয়া এই মেয়েটিকে বিবাহ করিলেন। তাহার পরে অনেক দিন চলিয়া গিয়াছে। হরমোহনেরও মৃত্যু হইয়াছে, তাঁহার ভগিনীও মারা গেছে। ব্যাবসাটিও প্রায় সম্পর্শ জানকীর হাতে আসিয়াছে। ক্ৰমে বাসাবাড়ি হইতে তাহার তেতালা বাড়ি হইল, চিরকালের নিকেলের ঘড়িটিকে অপমান