পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হালদারগোষ্ঠী & లిపి একমাত্র লক্ষ্য বাবর দেহ রক্ষা করা। যদি সে নিশবাস লইলে বাবর নিশ্বাস লইবার প্রয়োজনটুকু বাঁচিয়া যায় তাহা হইলে সে অহোরার কামারের হাপরের মতো হtলাইতে রাজি আছে। বাহিরের লোকে অনেক সময় ভাবে, মনোহরলাল বুঝি তাঁহার সেবককে অনাবশ্যক খাটাইয়া অন্যায় পীড়ন করিতেছেন। কেননা, হাত হইতে গড়গড়ির নলটা হয়তো মাটিতে পড়িয়াছে, সেটাকে তোলা কঠিন কাজ নহে, অথচ সেজন্য ডাক দিয়া অন্য ঘর হইতে রামচরণকে দৌড় করানো নিতান্ত বিসদৃশ বলিয়াই বোধ হয় ; কিন্তু, এই-সকল ভুরি ভুরি অনাবশ্যক ব্যাপারে নিজেকে অত্যাবশ্যক করিয়া তোলাতেই রামচরণের প্রভূত আনন্দ । যেমন তাঁহার রামচরণ, তেমনি তাঁহার আর-একটি অনচের নীলকন্ঠ। বিষয়রক্ষার ভার এই নীলকণ্ঠের উপর। বাবরে প্রসাদপরিপন্ট রামচরণটি দিব্য সচিরূপ, কিন্তু নীলকণ্ঠের দেহে তাহার অস্থিককালের উপর কোনোপ্রকার আর নাই বলিলেই হয়। বাবর ঐশ্বযভাণ্ডারের বারে সে মতিমান দভিক্ষের মতো পাহারা দেয়। বিষয়টা মনোহরলালের, কিন্তু তাহার মমতাটা সম্পণে নীলকণ্ঠের । নীলকণ্ঠের সঙ্গে বনোয়ারিলালের খিটিমিটি অনেক দিন হইতে বাধিয়াছে। মনে করো, বাপের কাছে দরবার করিয়া বনোয়ারি বড়োবউয়ের জন্য একটা নতন গহনা গড়াইবার হঝুেম আদায় করিয়াছে। তাহার ইচ্ছা, টাকাটা বাহির করিয়া লইয়া নিজের মনোমত করিয়া জিনিসটা ফরমাশ করে। কিন্তু, সে হইবার জো নাই। খরচপত্রের সমস্ত কাজই নীলকণ্ঠের হাত দিয়াই হওয়া চাই । তাহার ফল হইল এই, গহনা হইল বটে, কিন্তু কাহারও মনের মতো হইল না। বনোয়ারির নিশ্চয় বিশ্বাস হইল, স্যাকরার সঙ্গে নীলকণ্ঠের ভাগবাটোয়ারা চলে। কড়া লোকের শত্রর অভাব নাই। ঢের লোকের কাছে বনোয়ারি ঐ কথাই শুনিয়া আসিয়াছে ষে, নীলকন্ঠ অনাকে যে পরিমাণে বণ্টিত করিতেছে নিজের ঘরে তাহার ততোধিক পরিমাণে সঞ্চিত হইয়া উঠিতেছে। অথচ দুই পক্ষে এই-যে সব বিরোধ জমা হইয়া উঠিয়াছে তাহা সামান্য পাঁচ-দশ টাকা লইয়া। নীলকণ্ঠের বিষয়বধির অভাব নাই— এ কথা তাহার পক্ষে বাঝা কঠিন নহে যে, বনোয়ারির সঙ্গে বনাইয়া চলিতে না পারিলে কোনো-না-কোনো দিন তাহার বিপদ ঘটিবার সম্পভাবনা। কিন্তু, মনিবের ধন সম্বন্ধে নীলকণ্ঠের একটা কৃপণতার বায় আছে। সে যেটাকে অন্যায্য মনে করে মনিবের হঝুেম পাইলেও কিছুতেই তাহা সে খরচ করিতে পারে না। এ দিকে বনোয়ারির প্রায়ই অন্যায্য খরচের প্রয়োজন ঘটিতেছে। পরেষের অনেক অন্যায্য ব্যাপারের মলে ষে কারণ থাকে সেই কারণটি এখানেও খাব প্রবলভাবে বর্তমান। বনোয়ারির সন্ত্রী কিরণলেখার সৌন্দয সম্বন্ধে নানা মত থাকিতে পারে, তাহা লইয়া আলোচনা করা নিপ্রয়োজন। তাহার মধ্যে যে মতটি বনোয়ারির, বর্তমান প্রসঙ্গে একমাত্র সেইটেই কাজের। বস্তুত সন্ত্রীর প্রতি বনোয়ারির মনের যে পরিমাণ টান সেটাকে বাড়ির অন্যান্য মেয়েরা বাড়াবাড়ি বলিয়াই মনে করে। অর্থাৎ, তাহারা নিজের স্বামীর কাছ হইতে যতটা আদর চায় অথচ পায় না, ইহা ততটা। কিরণলেখার বয়স যতই হউক, চেহারা দেখিলে মনে হয় ছেলেমানষেটি। বাড়ির বড়োবউয়ের যেমনতরো গিন্নিবান্নি ধরনের আকৃতি-প্রকৃতি হওয়া উচিত সে তাহা একেবারেই নহে। সবসন্ধে জড়াইয়া সে যেন বড়ো কপ।