পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

や○ミ গল্পগুচ্ছ বনোয়ারি তাহাকে আদর করিয়া অণ বলিয়া ডাকিত। যখন তাহাতেও কুলাইত না তখন বলিত পরমাণ। রসায়নশাসে যাঁহাদের বিচক্ষণতা আছে তাঁহারা জানেন, বিশ্বঘটনায় অণুপরমাণগুলির শক্তি বড়ো কম নয়। কিরণ কোনোদিন স্বামীর কাছে কিছর জন্য আবদার করে নাই। তাহার এমন একটি উদাসীন ভাব, যেন তাহার বিশেষ-কিছুতে প্রয়োজন নাই। বাড়িতে তাহার অনেক ঠাকুরঝি, অনেক ননদ; তাহাদিগকে লইয়া সর্বদাই তাহার সমস্ত মন ব্যাপত— নবযৌবনের নবজাগ্রত প্রেমের মধ্যে যে একটা নিজন তপস্যা আছে তাহাতে তাহার তেমন প্রয়োজন-বোধ নাই। এইজন্য বনোয়ারির সঙ্গে ব্যবহারে তাহার বিশেষ একটা আগ্রহের লক্ষণ দেখা যায় না। যাহা সে বনোয়ারির কাছ হইতে পায় তাহা সে শান্তভাবে গ্রহণ করে, অগ্রসর হইয়া কিছু চায় না। তাহার ফল হইয়াছে এই যে, সত্ৰীটি কেমন করিয়া খুশি হইবে সেই কথা বনোয়াবিকে নিজে ভাবিয়া বাহির করিতে হয়। সত্ৰী যেখানে নিজের মুখে ফরমাশ করে সেখানে সেটাকে তক করিয়া কিছ-নাকিছু খব করা সম্ভব হয়, কিন্তু নিজের সঙ্গে তো দর-কষাকষি চলে না। এমন সথলে অযাচিত দানে যাচিত দানের চেযে খরচ বেশি পড়িয়া যায । তাহার পরে স্বামীর সোহাগের উপহার পাইয়া কিরণ যে কতখানি খুশি হইল তাহা ভালো করিয়া বুঝিবার জো নাই। এ সম্বন্ধে প্রশ্ন করিলে সে বলে—বেশ ! ভালো ! কিন্তু, বনেয়ারির মনের খটকা কিছুতেই মেটে না , ক্ষণে ক্ষণে তাহার মনে হয়, হয়তো পছন্দ হয নাই। কিরণ স্বামীকে ঈষৎ ভৎসনা কবিষা বলে, “তোমার ঐ সবভাব। কেন এমন খ:ংখ:ং করছ। কেন, এ তো বেশ হয়েছে।” বনোয়ারি পাঠ্যপুস্তকে পড়িয়াছে— সন্তোষগণটি মানুষেব মহং গণে। কিন্তু, সন্ত্রীর সবভাবে এই মহৎ গণটি তাহাকে পীড়া দেয়। তাহার সতী তো তাহাকে কেবলমাত্র সন্তুষ্ট করে নাই, অভিভূত করিয়াছে, সেও সন্ত্রীকে অভিভূত করিতে চায় । তাহার সত্রীকে তো বিশেষ কোনো চেষ্টা করিতে হয় না— যৌবনের লালণ্য আপনি উছলিয়া পড়ে, সেবার নৈপুণ্য আপনি প্রকাশ হইতে থাকে। কিন্তু পরেষের তো এমন সহঙ্গ সযোগ নয়; পৌরুষের পরিচয় দিতে হইলে তাহাকে কিছু-একটা করিয়া তুলিতে হয়। তাহার যে বিশেষ একটা শক্তি আছে ইহা প্রমাণ করিতে না পারিলে পর্যষের ভালোবাসা লান হইয়া থাকে। আব-কিছু নাও যদি পাকে, ধন যে একটা শক্তির নিদর্শন, ময়রের পচ্ছের মতো সতীর কাছে সেই ধনের সমসত বর্ণচ্ছটা বিস্তার করিতে পারিলে তাহাতে মন সাল্পনা পায় । নীলকন্ঠ বনোয়ারির প্রেমনাট্যলীলার এই আয়োজনটাতে বারবার ব্যাঘাত ঘটাইয়াছে। বনোয়ারি বাড়ির বড়োবাব তব কিছুতে তাহার কর্তৃত্ব নাই, কতার প্রশ্রয় পাইযা ভূত হইয়া নীলকন্ঠ তাহার উপরে আধিপত্য করে— ইহাতে বনোয়ারির যে অসুবিধা ও অপমান সেটা আর কিছর জন্য তত নহে যতটা পঞ্চশরের তণে মনের মতো শর জোগাইবার অক্ষমতা -বশত। একদিন এই ধনসম্পদে তাহারই অবাধ অধিকার তো জমিলে। কিন্তু যৌবন কি চিরদিন থাকিবে? বসন্তের রঙিন পেয়ালয় তখন এ সাধারস এমন করিয়া আপনাআপনি ভরিয়া উঠিবে না; টাকা তখন বিষয়ীর টাকা হইয়া খুব শক্ত হইয়া জমিবে, গিরিশিখরের তুষারসংঘাতের মতো— তাহাতে কথায় কথায় অসাবধানের অপব্যয়ের ঢেউ খেলিতে থাকিবে না। টাকার দরকার তো এখনই, যখন আনন্দে তাহা নয়-ছয়