পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○3 গল্পগুচ্ছ অনরোধ লইয়া সে কিরণের শরণাপন্ন হইয়াছে। কিরণের শাশুড়ির কাছে গিয়া কোনো ফল নাই তাহা সকলেই জানে; কেননা, নীলকণ্ঠের ব্যবস্থায় কেহ যে অচিড়টুকু কাটিতে পারে এ কথা তিনি কল্পনা করিতেও পারেন না। নীলকণ্ঠের প্রতি বনোয়ারির খুব একটা আক্লোশ আছে জানিয়াই মধকৈবত তাহার স্ত্রীকে কিরণের কাছে পাঠাইয়াছে। বনোয়ারি যতই রাগ এবং যতই আস্ফালন করকে, কিরণ নিশ্চয় জানে যে, নীলকণ্ঠের কাজের উপর হস্তক্ষেপ করিবার কোনো অধিকার তাহার নাই। এইজন্য কিরণ সখদাকে বার বার করিয়া বঝাইবার চেষ্টা করিয়া বলিল, "বাছা, কী করব বলো। জানই তো এতে আমাদের কোনো হাত নেই। কতা আছেন, মধনকে বলো, তাঁকে গিয়ে ধরকে।” সে চেষ্টা তো পাবেই হইয়াছে। মনোহরলালের কাছে কোনো বিষয়ে নালিশ উঠিলেই তিনি তাহার বিচারের ভার নীলকণ্ঠের পরেই অপাণ করেন, কখনোই তাহার অন্যথা হয় না। ইহাতে বিচারপ্রাথীর বিপদ আরও বাড়িয়া উঠে। দ্বিতীয়বার কেহ যদি তাঁহার কাছে আপীল করিতে চায় তাহা হইলে কতা রাগিয়া আগন হইয়া উঠেন— বিষয়কমের বিরক্তিই যদি তাঁহাকে পোহাইতে হইল তবে বিষয় ভোগ করিয়া তাঁহার সখ কী! সখদা যখন কিরণের কাছে কান্নাকটি করিতেছে তখন পাশের ঘরে বসিযা বনোয়ারি তাহার বন্দকের চোঙে তেল মাখাইতেছিল। বনোয়বি সব কথাই শুনিল । কিরণ করণেকন্ঠে যে বার বার করিয়া বলিতেছিল যে তাহারা ইহার কোনো প্রতিকার করিতে অক্ষম, সেটা বনোয়ারির বকে শেলের মতো বিধিল । সেদিন মাঘীপণিমা ফাল্গনের আরম্ভে আসিয়া পড়িয়াছে। দিনের বেলাকাব গমট ভাঙিয়া সন্ধ্যাবেলায় হঠাৎ একটা পাগলা হাওয়া মাতিয়া উঠিল। কোকিল তো ডাকিয়া ডাকিয়া অস্থির ; বারবার এক সরের আঘাতে সে কোথাকার কোন ঔদাসীনাকে বিচলিত করিবার চেষ্টা করিতেছে। আর, আকাশে ফলগন্ধের মেলা বসিয়াছে, যেন ঠেলাঠেলি ভিড় ; জানলার ঠিক পাশেই অন্তঃপরের লাগান হইতে মনচুকুন্দফলের গন্ধ বসন্তের আকাশে নিবিড় নেশা ধরাইয়া দিল। কিরণ সেদিন লটকানের-রঙ-করা একখানি শাড়ি এবং খোঁপায় বেলফলের মালা পরিয়াছে। এই দম্পতির চিরনিয়ম-অনুসারে সেদিন বনোয়ারির জন্যও ফাল্গন-ঋতুযাপনের উপযোগী একখানি লটকানে-রঙিন চাদর ও বেলফলের গোড়েমালা প্রস্তুত। রাত্রির প্রথম প্রহর কাটিয়া গেল তব বনোয়ারির দেখা নাই। যৌবনের ভরা পেয়ালাটি আজ তাহার কাছে কিছুতেই রচিল না। প্রেমের বৈকুণ্ঠলোকে এত বড়ো কুণ্ঠা লইয়া সে প্রবেশ করিবে কেমন করিয়া। মধকৈবতের দুঃখ দরে করিবার ক্ষমতা তাহার নাই, সে ক্ষমতা আছে নীলকণ্ঠের! এমন কাপরেষের কণ্ঠে পরাইবার জন্য মালা কে গথিয়াছে ! প্রথমেই সে তাহার বাহিরের ঘরে নীলকন্ঠকে ডাকাইয়া আনিল এবং দেনার দায়ে মধকৈবর্তকে নষ্ট করিতে নিষেধ করিল। নীলকণ্ঠ কহিল, মধকে যদি প্রশ্রয় দেওয়া হয় তাহা হইলে এই তামাদির মথে বিস্তর টাকা বাকি পড়িবে; সকলেই ওজর করিতে আরম্ভ করিবে। বনোয়ারি তকে যখন পারিল না তখন যাহা মনখে