পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

も○ 。 গল্পগুচ্ছ চোর, সে মনিবের টাকা ভাঙিয়া নিজের পেট ভরিতেছে। কথাটার কোনো প্রমাণ নই এবং তাহা সত্যও নহে। নীলকণ্ঠের বারা বিষয়ের উন্নতি হইয়াছে, এবং সে চুরিও করে না। বনোয়ারি মনে করিয়াছিল, নীলকণ্ঠের সৎস্বভাবের প্রতি অটল বিশ্ববাস আছে বলিয়াই কতা সকল বিষয়েই তাহার পরে এমন চোখ বজিয়া নিভর করেন। এটা তাহার ভ্রম। মনোহরলালের মনে নিশ্চয় ধারণা যে, নীলকন্ঠ সযোগ পাইলে চুরি করিয়া থাকে। কিন্তু, সেজন্য তাহার প্রতি তাঁহার কোনো অশ্রদ্ধা নাই। কারণ, আবহমান কাল এমনি ভাবেই সংসার চলিয়া আসিতেছে। অনচেরগণের চুরির উচ্ছিষ্টেই তো চিরকাল বড়োঘর পালিত। চুরি করিবার চাতুরী যাহার নাই, মনিবের বিষয়রক্ষা করিবার বন্ধিই বা তাহার জোগাইবে কোথা হইতে । ধমপত্র যুধিষ্ঠিরকে দিয়া তো জমিদারির কাজ চলে না। মনোহর অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া উঠিয়া কহিলেন, “আচ্ছা, আচ্ছা, নীলকন্ঠ কী করে না-করে সে কথা তোমাকে ভাবিতে হইবে না।” সেই সঙ্গে ইহাও বলিলেন, “দেখো দেখি, বংশীর তো কোনো বালাই নাই। সে কেমন পড়াশনা করিতেছে ; ঐ ছেলেটা তব একটা মানুষের মতো ।” ইহার পরে অখিল মজুমদারের দাগতিকাহিনীতে আর রস জমিল না। সুতরাং, মনোহরলালের পক্ষে সেদিন বসন্তের বাতাস ব্যথা বহিল এবং দিঘির কালো জলের উপর চাঁদের আলোর ঝকঝকা করিয়া উঠিবার কোনো উপযোগিতা রহিল না। সেদিন সন্ধ্যাটা কেবল ব্যথা হয় নাই বংশী এবং নীলকণ্ঠের কাছে । জানলা বন্ধ করিয়া বংশী অনেক রাত পর্যন্ত পড়িল এবং উকিলের সঙ্গে পরামর্শ করিষা নীলকন্ঠ অধোক রাত কাটাইয়া দিল । কিরণ ঘরের প্রদীপ নিবাইয়া দিয়া জ্ঞানলার কাছে বসিয়া । কাজকম আজ সে সকাল-সকাল সারিয়া লইয়াছে। রাত্রের আহার বাকি, কিন্তু এখনো বনোয়ারি খায় নাই, তাই সে অপেক্ষা করিতেছে। মধুকৈবতের কথা তাহার মনেও নাই। বনেয়ারি যে মধরে দুঃখের কোনো প্রতিকার করিতে পারে না, এ সম্বন্ধে কিরণের মনে ক্ষোভের লেশমাত্র ছিল না। তাহার স্বামীর কাছ হইতে কোনোদিন সে কোনো বিশেষ ক্ষমতার পরিচয় পাইবার জন্য উৎসকে নহে। পরিবারের গৌরবেই তাহার স্বামীর গৌরব। তাহার স্বামী তাহার শ্বশুরের বড়ো ছেলে, ইহর চেযে তাহাকে যে আরও বড়ো হইতে হইবে, এমন কথা কোনোদিন তাহার মনেও হয় নাই । ইহারা যে গোঁসাইগঞ্জের সুবিখ্যাত হালদার-বংশ ! বনোয়ারি অনেক রাত্রি পযন্ত বাহিরের বারান্ডায় পায়চারি সমাধা করিয়া ঘরে আসিল। সে ভুলিয়া গিয়াছে যে, তাহার খাওয়া হয় নাই। কিরণ যে তাহার অপেক্ষায় না-খাইয়া বসিয়া আছে এই ঘটনাটা সেদিন যেন তাহাকে বিশেষ করিয়া আঘাত করিল। কিরণের এই কষ্টস্বীকারের সঙ্গে তাহার নিজের অকমণ্যতা যেন খাপ খাইল না। অন্নের গ্রাস তাহার গলায় বাধিয়া যাইবার জো হইল। বনোয়ারি অত্যন্ত উত্তেজনার সহিত সন্ত্রীকে বলিল, "যেমন করিয়া পারি মধকৈবতীকে আমি রক্ষা করিব।” কিরণ তাহার এই অনাবশ্যক উগ্রতায় বিস্মিত হইযা কহিল, “শোনো একবার! তুমি তাহাকে বাঁচাইবে কেমন করিয়া।" মধরে দেনা বনোয়ারি নিজে শোধ করিয়া দিবে এই তাহার পপ, কিন্তু বনোয়ারির