হালদারগোষ্ঠী も●● হাতে কোনোদিন তো টাকা জমে না। স্থির করিল, তাহার তিনটে ভালো বন্দকের মধ্যে একটা বন্দকে এবং একটা দামি হীরার আংটি বিক্রয় করিয়া সে অর্থ সংগ্রহ করিবে। কিন্তু, গ্রামে এ-সব জিনিসের উপযন্ত মল্যে জটিবে না এবং বিক্লয়ের চেষ্টা করিলে চারি দিকে লোকে কানাকানি করিবে। এইজন্য কোনো-একটা ছতা করিয়া বনোয়ারি কলিকাতায় চলিয়া গেল। যাইবার সময় মধকে ডাকিয়া আশবাস দিয়া গেল, তাহার কোনো ভয় নাই । এ দিকে বনোয়ারির শরণাপন্ন হইয়াছে বুঝিয়া, নীলকন্ঠ মধর উপরে রাগিয়া আগন হইয়া উঠিয়াছে। পেয়াদার উৎপীড়নে কৈবতপাড়ার আর মানসম্প্রম থাকে না । কলিকাতা হইতে বনোয়ারি যেদিন ফিরিয়া আসিল সেই দিনই মধরে ছেলে স্বরুপ হাঁপাইতে হাঁপাইতে ছটিয়া আসিয়া একেবারে বনোয়ারির পা জড়াইয়া ধরিয়া হাউমাউ করিয়া কান্না জড়িয়া দিল। “কণী রে কী, ব্যাপারখানা কী।” স্বরুপ বলিল, তাহার বাপকে নীলকন্ঠ কাল রাত্রি হইতে কাছারিতে বন্ধ করিয়া রাখিয়াছে । বনোয়ারির সব শরীর রাগে কপিতে লাগিল। কহিল, “এখনি গিয়া থানায় খবর দিয়া আয় গে।” 齡。 কী সবনাশ । থানায় খবর নীলকণ্ঠের বিরুদ্ধে । তাহার পা উঠিতে চায় না। শেষকালে বনোয়ারির তাড়নায় থানায় গিয়া সে খবর দিল । পলিস হঠাৎ কাছারিতে আসিয়া বন্ধনদশা হইতে মধকে খালাস করিল এবং নীলকন্ঠ ও কাছারির কয়েকজন পেয়দাকে আসামী করিয়া ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে চালান করিয়া দিল । মনোহর বিষম ব্যতিব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। তাঁহার মকদ্দমার মন্ত্রীরা ঘষের উপলক্ষ করিয়া পলিসের সঙ্গে ভাগ করিয়া টাকা লটিতে লাগিল। কলিকাতা হইতে এক বারিস্টার আসিল, সে একেবারে কাঁচা, নতন-পাস-করা । সুবিধা এই, যত ফি তাহার নামে খাতায় খরচ পড়ে তত ফি তাহার পকেটে উঠে না। ও দিকে মধকৈবতের পক্ষে জেলা-আদালতের একজন মাতব্বর উকিল নিষত্তে হইল । কে যে তাহার খরচ জোগাইতেছে বোঝা গেল না। নীলকণ্ঠের ছয় মাস মেয়াদ হইল। হাইকোটের আপিলেও তাহাই বহাল রহিল। ঘড়ি এবং বন্দকেটা যে উপযন্ত মল্যে বিক্রয় হইয়াছে তাহা ব্যথ হইল না— আপাতত মধ্য বাঁচিয়া গেল এবং নীলকণ্ঠের জেল হইল। কিন্তু, এই ঘটনার পরে মধ তাহার ভিটায় টি-কিবে কী করিয়া। বনোয়ারি তাহাকে আশ্বাস দিয়া কহিল, “তুই থাক, তোর কোনো ভয় নাই।” কিসের জোরে ষে আশ্বাস দিল তাহা সেই জানে— বোধ করি, নিছক নিজের পৌরুষের পধ্যায়। বনোয়ারি যে এই ব্যাপারের মলে আছে তাহা সে লুকাইয়া রাখতে বিশেষ চেষ্টা করে নাই। কথাটা প্রকাশ হইল : এমন-কি, কতার কানেও গেল। তিনি চাকরকে দিয়া বলিয়া পাঠাইলেন, “বনোয়ারি যেন কদাচ আমার সম্মুখে না আসে।” বনোয়ারি পিতার আদেশ অমান্য করিল না। কিরণ তাহার স্বামীর ব্যবহার দেখিয়া অবাক। এ কী কাণ্ড। বাড়ির বড়োবাব—ে বাপের সঙ্গে কথাবাত বন্ধ ! তার উপরে নিজেদের আমলাকে জেলে পাঠাইয়া বিশ্বের লোকের কাছে নিজের পরিবারের মাথা হে’ট করিয়া দেওয়া ! তাও এই এক সামান্য মধকৈবতীকে লইয়া!
পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৪৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।