পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

vს 8 O গল্পগুচ্ছ হইতে আরম্ভ করিয়া অমর ও চেীর কবির যে-সমস্ত কবিতার সোহাগে সে প্রেয়সীকে মণ্ডিত করিয়া আসিয়াছে আজ তাহা এই হালদারগোষ্ঠীর বড়োবউকে কিছুতেই মানাইতেছে না। হায় রে, বসন্তের হাওয়া তব বহে, রাত্রে শ্রাবণের বর্ষণ তব মুখরিত হইয়া উঠে এবং অতৃপ্ত প্রেমের বেদনা শন্য হৃদয়ের পথে পথে কাদিয়া কাঁদিয়া বেড়ায়। প্রেমের নিবিড়তায় সকলের তো প্রয়োজন নাই; সংসারের ছোটো কুনকের মাপের বাঁধা বরাচ্ছেদ অধিকাংশ লোকের বেশ চলিয়া যায়। সেই পরিমিত ব্যবস্থায় বৃহৎ সংসারে কোনো উৎপাত ঘটে না। কিন্তু, এক-একজনের ইহাতে কুলায় না। তাহারা অজাত পক্ষীশাবকের মতো কেবলমাত্র ডিমের ভিতরকার সংকীর্ণ খাদ্যরসটুকু লইয়। বাঁচে না, তাহারা ডিম ভাঙিয়া বাহির হইয়াছে, নিজের শক্তিতে খাদ্য-আহরণের বৃহৎ ক্ষেত্র তাহাদের চাই। বনোয়ারি সেই ক্ষুধা লইয়া জন্মিয়ছে, নিজের প্রেমকে নিজের পৌরুষের বারা সাথক করিবার জন্য তাহার চিত্ত উৎসক, কিন্তু যে দিকেই সে ছয়টিতে চায় সেই দিকেই হালদারগোষ্ঠীর পাকা ভিত নড়িতে গেলেই তাহার মাথা ঠুকিয়া যায়। দিন আবার পবের মতো কাটিতে লাগিল। আগের চেয়ে বনোয়ারি শিকারে বেশি মন দিয়াছে, ইহা ছাড়া বাহিরের দিক হইতে তাহার জীবনে আর বিশেষ কিছ: পরিবতন দেখা গেল না। অন্তঃপরে সে আহার করিতে যায়, আহারের পর সতীর সঙ্গে যথাপরিমাণে বাক্যালাপও হয। মধুকৈবতীকে কিরণ আজও ক্ষমা করে নাই, কেননা, এই পরিবারে তাহার স্বামী যে আপন প্রতিষ্ঠা হারাইয়াছে তাহার মল কারণ মধ। এইজন্য ক্ষণে ক্ষণে কেমন করিয়া সেই মধর কথা অত্যন্ত তীব্র হইয়া কিবণের মখে আসিয়া পড়ে। মধরে যে হাড়ে হাড়ে বজাতি, সে যে শয়তানের অগ্রগণ্য, এবং মধকে দয়া করাটা যে নিতান্তই একটা ঠকা, এ কথা বারবার বিস্তারিত করিয়াও কিছুতে তাহার শ্রান্তি হয় না। বনোযারি প্রথম দুই-একদিন প্রতিবাদের চেষ্টা করিয়া কিরণের উত্তেজনা প্রবল করিয়া তুলিয়াছিল, তাহার পর হইতে সে কিছুমাত্র প্রতিবাদ করে না। এমনি করিয়া বনোয়ারি তাহার নিয়মিত গহধম রক্ষা করিতেছে; কিরণ ইহাতে কোনো অভাব-অসপণতা অনুভব করে না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে বনোয়ারির জীবনটা বিবণ, বিরস এবং চির-অভূক্ত। এমন সময় জানা গেল, বাড়ির ছোটোবউ, বংশীর স্টী গভি‘ণী । সমস্ত পরিবার আশায় উৎফুল্ল হইয়া উঠিল। কিরণের লারা এই মহদ বংশের প্রতি যে কতব্যের ক্ৰটি হইয়াছিল, এতদিন পরে তাহা পরণের সম্ভাবনা দেখা যাইতেছে ; এখন ষষ্ঠীর কৃপায় কন্যা না হইয়া পত্র হইলে রক্ষা। পত্রই জন্মিল। ছোটোবাব কলেজের পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ, বংশের পরীক্ষাতেও প্রথম মাক পাইল । তাহার আদর উত্তরোত্তর বাড়িয়া উঠিতেছিল, এখন তাহার অাদরের সীমা রহিল না। সকলে মিলিয়া এই ছেলেটিকে লইয়া পড়িল। কিরণ তো তাহাকে এক মহতে কোল হইতে নামাইতে চায় না। তাহার এমন অবস্থা যে, মধকৈবতের স্বভাবের কুটিলতার কথাও সে প্রায় বিস্মত হইবার জো হইল। বনোয়ারির ছেলে-ভালোবাসা অত্যন্ত প্রবল। যাহা কিছু ছোটো, অক্ষম, স্কুমার,