পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বোটমী もも。 আমার স্বামী আমাকে খুজিয়া বেড়াইলেন, কোথাও দেখিতে পাইলেন না। ওগো, আমার সে পথিবী আর নাই, আমি সে সয্যের আলো আর খাজিয়া পাইলাম না। ঠাকুরঘরে আমার ঠাকুরকে ডাকি, সে আমার দিকে মুখ ফিরাইয়া থাকে। দিন কোথায় কেমন করিয়া কাটিল ঠিক জানি না। রাত্রে স্বামীর সঙ্গে দেখা হইবে। তখন যে সমস্ত নীরব এবং অন্ধকার। তখনি আমার স্বামীর মন যেন তারার মতো ফটিয়া উঠে। সেই অধিারে এক-একদিন তাঁহার মাখে একটা-আধটা কথা শনিয়া হঠাৎ বঝিতে পারি, এই সাদা মানযেটি যাহা বোঝেন তাহা কতই সহজে বঝিতে পারেন। সংসারের কাজ সারিয়া আসিতে আমার দেরি হয় । তিনি আমার জন্য বিছানার বাহিরে অপেক্ষা করেন। প্রায়ই তখন আমাদের গরের কথা কিছদ-না-কিছ হয়। অনেক রাত করিলাম। তখন তিনপ্রহর হইবে, ঘরে আসিয়া দেখি, আমার স্বামী তখনো খাটে শোন নাই, নীচে শুইয়া ঘামাইয়া পড়িয়াছেন। আমি অতি সাবধানে শব্দ না করিয়া তাঁহার পায়ের তলায় শ্যইয়া পড়িলাম। ঘুমের ঘোরে একবার তিনি পা ছড়িলেন, আমার বকের উপর আসিয়া লাগিল। সেইটেই আমি তাঁর শেষ দান বলিয়া গ্রহণ করিয়াছি । পরদিন ভোরে যখন তাঁর ঘমে ভাঙিল আমি তখন উঠিয়া বসিয়া আছি। জানলার বাহিরে কঠিালগাছটার মাথার উপর দিয়া অাঁধারের এক ধারে অল্প একটা রঙ ধরিয়াছে : তখনো কাক ডাকে নাই । আমি স্বামীর পায়ের কাছে মাথা লটাইয়া প্রণাম করিলাম। তিনি তাড়াতাড়ি উঠিয়া বসিলেন এবং আমার মুখের দিকে অবাক হইযা চাহিয়া রহিলেন । আমি বলিলাম, “আর আমি সংসার করিব না।” স্বামী বোধ করি ভাবিলেন, তিনি সবপন দেখিতেছেন। কোনো কথাই বলিতে পারিলেন না। আমি বলিলাম, “আমাব মাথার দিবা, তুমি অন্য সত্ৰী বিবাহ করো। আমি বিদাষ লইলাম।” স্বামী কহিলেন, “তুমি এ কী বলিতেছ। তোমাকে সংসার ছাড়িতে কে বলিল।” আমি বলিলাম, “গর্ঠাকুর।” স্বামী হতবুধি হইয়া গেলেন, “গর্ঠাকুর ; এমন কথা তিনি কখন বলিলেন।” আমি বলিলাম, “আজ সকালে যখন স্নান করিয়া ফিরিতেছিলাম তাঁহার সঙ্গে দেখা হইয়াছিল। তখনি বলিলেন।” স্বামীর কন্ঠ কপিয়া গেল। জিজ্ঞাসা করিলেন, “এমন আদেশ কেন করিলেন।” আমি বলিলাম, “জানি না। তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিয়ো, পারেন তো তিনিই বঝোইয়া দিবেন।” স্বামী বলিলেন, “সংসারে থাকিয়াও তো সংসার , ত্যাগ করা যায়, আমি সেই কথা গরকে বঝাইয়। বলিব।" আমি বলিলাম, “হয়তো গরে বঝিতে পারেন, কিন্তু আমার মন বকিবে না। আমার সংসার করা আজ হইতে ঘুচিল।” স্বামী চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন। আকাশ যখন ফরসা হইল তিনি বলিলেন, “চলো-না, দুজনে একবার তাঁর কাছেই যাই।”