পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পল্লীর পর ' ¢ጫ » প্রকাশ করতে লাগলেন । ایر আমার মেয়েটি জন্ম নিয়েই মারা গেল। আমাকেও সে সঙ্গে বাবার সময় ডাক দিয়েছিল। সে যদি বেচে থাকত তা হলে সেই আমার জীবনে যা-কিছু বড়ো, যা-কিছু সত্য, সমস্ত এনে দিত ; তখন মেজোবউ থেকে একেবারে মা হয়ে বসতুম। মা যে এক সংসারের মধ্যে থেকেও বিশ্ব-সংসারের। মা হবার দুঃখটকু পেলাম, কিন্তু মা হবার মন্তিটুকু পেলাম না। মনে আছে, ইংরেজ ডাক্তার এসে আমাদের অন্দর দেখে আশ্চব হয়েছিল এবং অতুিড়ঘর দেখে বিরক্ত হয়ে বকবকি করেছিল। সদরে তোমাদের একটুখানি বাগান আছে। ঘরে সাজসজা-অাসবাবের অভাব নেই। আর অন্দরটা যেন পশমের কাজের উলটো পিঠ; সে দিকে কোনো লক্ষজা নেই, শ্রী নেই, সজা নেই। সে দিকে আলো মিটমিট করে জনলে; হাওয়া চোরের মতো প্রবেশ করে ; উঠোনের আবর্জনা নড়তে চায় না ; দেয়ালের এবং মেজের সমস্ত কলক অক্ষয় হয়ে বিরাজ করে । কিন্তু, ডাক্তার একটা ভুল করেছিল; সে ভেবেছিল, এটা বুঝি আমাদের অহোরান্ত দুঃখ দেয়। ঠিক উলটো ; অনাদর-জিনিসটাই ছাইয়ের মতো, সে ছাই আগনকে হয়তো ভিতরে ভিতরে জমিয়ে রাখে কিন্তু বাইরে থেকে তার তাপটকে বুঝতে দেয় না। আত্মসম্মান যখন কমে যায় তখন অনাদরকে তো অন্যায্য বলে মনে হয় না । সেইজন্যে তার বেদনা নেই। তাই তো মেয়েমানুষ দুঃখ বোধ করতেই লঙ্গজা পায়। আমি তাই বলি, মেয়েমানুষকে দুঃখ পেতেই হবে এইটে যদি তোমাদের ব্যবস্থা হয় তা হলে যত দরে সম্ভব তাকে অনাদরে রেখে দেওয়াই ভালো ; আদরে দুঃখের ব্যথাটা কেবল ಡಥ್ರ ಆಡೆ ! যেমন করেই রাখ, দুঃখ ষে আছে এ কথা মনে করবার কথাও কোনোদিন মনে আসে নি। অতুিড়ঘরে মরণ মাথার কাছে এসে দাঁড়ালো, মনে ভয়ই হল না। জীবন আমাদের কাঁই বা যে মরণকে ভয় করতে হবে ? অাদরে যত্নে যাদের প্রাণের বাঁধন শক্ত করেছে মরতে তাদেরই বাধে। সেদিন যম যদি আমাকে ধরে টান দিত তা হলে আলগা মাটি থেকে যেমন অতি সহজে ঘাসের চাপড়া উঠে আসে সমস্ত শিকড়সন্ধ আমি তেমনি করে উঠে আসতুম। বাঙালির মেয়ে তো কথায় কথায় মরতে যায় । কিন্তু, এমন মরায় বাহাদরিটা কী। মরতে লজা হয়, আমাদের পক্ষে ওটা এতই সহজ। আমার মেয়েটি তো সন্ধ্যাতারার মতো ক্ষণকালের জন্যে উদয় হয়েই অন্ত গেল । আবার আমার নিত্যকম এবং গোরবোছরে নিয়ে পড়লাম। জীবন তেমনি করেই গড়াতে গড়াতে শেষ পর্যন্ত কেটে যেত ; আজকে তোমাকে এই চিঠি লেখবার দরকারই হত না। কিন্তু, বাতাসে সামান্য একটা বীজ উড়িয়ে নিয়ে এসে পাকা দালানের মধ্যে অশথ গাছের অঙ্কুর বের করে; শেষকালে সেইটুকু থেকে ইটকাঠের বকের পজির বিদীর্ণ হয়ে যায়। আমার সংসারের পাকা বন্দোবস্তের মাঝখানে ছোটো একটুখানি জীবনের কণা কোথা থেকে উড়ে এসে পড়ল: তার পর থেকে ফাটল শর হল। বিধবা মার মৃত্যুর পরে আমার বড়ো জায়ের বোন বিন্দ তার খড়ততো ভাইদের অত্যাচারে আমাদের বাড়িতে তার দিদির কাছে এসে যেদিন আশ্রয় নিলে, তোমরা সেদিন ভাবলে, এ আবার কোথাকার আপদ। আমার পোড়া স্বভাব, কী করব