পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাণীর পর ta> সে বললে, “না।” আমি বললাম, “রাজি করতে পারলি নে ?” সে বললে, “আর দরকারও নেই। কাল রাত্তিরে সে কাপড়ে আগন ধরিয়ে আত্মহত্যা করে মরেছে। বাড়ির যে ভাইপোটার সঙ্গে ভাব করে নিয়েছিলম তার কাছে খবর পেলাম, তোমার নামে সে একটা চিঠি রেখে গিয়েছিল কিন্তু সে চিঠি ওরা নস্ট করেছে।” যাক, শান্তি হল। দেশসন্ধ লোক চটে উঠল। বলতে লাগল, মেয়েদের কাপড়ে আগন লাগিয়ে মরা একটা ফ্যাশান হয়েছে। তোমরা বললে, এ-সমস্ত নাটক করা ! তা হবে। কিন্তু, নাটকের তামাশাটা কেবল বাঙালি মেয়েদের শাড়ির উপর দিয়েই হয় কেন আর বাঙালি বীরপর্যদের কোঁচার উপর দিয়ে হয় না কেন, সেটাও তো ভেবে দেখা উচিত । বিন্দিটার এমনি পোড়া কপাল বটে ; যতদিন বেচে ছিল রাপে গণে কোনো যশ পায় নি— মরবার বেলাও যে একটা ভেবে চিন্তে এমন একটা নতুন ধরনে মরবে যাতে দেশের পরিষেরা খুশি হয়ে হাততালি দেবে তাও তার ঘটে এল না ! মরেণ্ড লোকদের চটিয়ে দিলে ! দিদি ঘরের মধ্যে লকিয়ে কাঁদলেন। কিন্তু, সে কান্নার মধ্যে একটা সান্দ্রনা ছিল। যাই হোক-না কেন, তব রক্ষা হয়েছে। মরেছে বই তো না; বেচে থাকলে কী না হতে পারত। আমি তীথে এসেছি। বিন্দর আর আসবার দরকার হল না, কিন্তু আমার দরকার ছিল । দুঃখ বলতে লোকে যা বোঝে তোমাদের সংসারে তা আমার ছিল না। তোমাদের ঘরে খাওয়া-পর অসচ্ছল নয় ; তোমার দাদার চরিত্র যেমন হোক, তোমার চরিত্রে এমন কোনো দোষ নেই যাতে বিধাতাকে মন্দ বলতে পারি। যদি বা তোমার স্বভাব তোমার দাদার মতোই হত তা হলেও হয়তো মোটের উপর আমার এমনি ভাবেই দিন চলে যেত এবং আমার সতীসাধনী বড়ো জায়ের মতো পতিদেবতাকে দোষ না দিয়ে বিশ্বদেবতাকেই আমি দোষ দেবার চেষ্টা করতুম। অতএব তোমাদের নামে আমি কোনো নালিশ উত্থাপন করতে চাই নে— আমার এ চিঠি সেজন্যে নয়। কিন্তু, আমি আর তোমাদের সেই সাতাশ-নব্বর মাখন বড়ালের গলিতে ফিরব না। আমি বিন্দকে দেখেছি। সংসারের মাঝখানে মেয়েমানুষের পরিচয়টা যে কী তা আমি পেয়েছি। আর আমার দরকার নেই। তার পরে এও দেখেছি, ও মেয়ে বটে তব ভগবান ওকে ত্যাগ করেন নি। ওর উপরে তোমাদের যত জোরই থাক-না কেন, সে জোরের অন্ত আছে। ও আপনার হতভাগ্য মানবজন্মের চেয়ে বড়ো। তোমরাই যে আপন ইচ্ছামত আপন দস্তুর দিয়ে ওর জীবনটাকে চিরকাল পায়ের তলায় চেপে রেখে দেবে, তোমাদের পা এত লম্বা নয়। মৃত্যু তোমাদের চেয়ে বড়ো। সেই মৃত্যুর মধ্যে সে মহান – সেখানে বিন্দ কেবল বাঙালি ঘরের মেয়ে নয়, কেবল খড়ততো ভায়ের বোন নয়, কেবল অপরিচিত পাগল স্বামীর প্রবশ্চিত সী নয়। সেখানে সে অনন্ত ।