পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

もも'8 - গল্পগুচ্ছ করায় লাগিলাম। এক তো পিতার মৃত্যু হওয়াতে আমার ঘাড়েই সংসারের দায় চাপিল; তার পরে আর-এক উপসৰ্গ আসিয়া জটিল, সে কথাও বলিতেছি। প্রসন্ন বলিয়া একটি ছেলে আমার সঙ্গে পড়িত। সে যেমন মখের তেমনি নিন্দক । আমাদের পৈতৃক সততার খ্যাতিটাকে লইয়া খোঁচা দিবার সে ভারি সংযোগ পাইয়াছিল। বাবা আমার নাম দিয়াছিলেন সত্যধন। প্রসন্ন আমাদের দারিদ্র্য লক্ষ্য করিয়া বলিত, “বাবা দিবার বেলা দিলেন মিথ্যাধন, আর নামের বেলা দিলেন সত্যধন, তার চেয়ে ধনটাকে সত্য দিয়া নামটাকে মিথ্যা দিলে লোকসান হইত না।” প্রসন্নর মুখটাকে বড়ো ভয় করিতাম। অনেক দিন তার দেখাই ছিল না। ইতিমধ্যে সে বমায় লুধিয়ানায় শ্রীরঙ্গপত্তনে নানা রকম-বেরকমের কাজ করিয়া আসিয়াছে। সে হঠাৎ কলিকাতায় আসিয়া আমাকে পাইয়া বসিল। যার ঠাট্রাকে চিরদিন ভয় করিয়া আসিয়াছি তার শ্রদ্ধা পাওয়া কি কম আরাম । প্রসন্ন কহিল, “ভাই, আমার এই কথা রইল, দেখে নিয়ো, একদিন তুমি যদি দ্বিতীয় মতি শীল বা দগাচরণ লা' না হও তবে আমি বউবাজারের মোড় হইতে বাগবাজারের মোড় পর্যন্ত বরাবর সমানে নাকে খত দিতে রাজি আছি।” প্রসন্নর মুখে এত বড়ো কথাটা যে কতই বড়ো তাহা প্রসন্নর সঙ্গে যারা এক ক্লাসে না পড়িয়াছে তারা বুঝিতেই পারিবে না। তার উপরে প্রসন্ন পথিবীটাকে খুব করিয়া চিনিয়া আসিয়াছে ; উহার কথার দাম আছে। সে বলিল, “কাজ বোঝে এমন লোক আমি ঢের দেখিয়াছি দাদা— কিন্তু তারাই সব চেয়ে পড়ে বিপদে। তারা বৃদ্ধির জোরেই কিসিত মাত করিতে চায়, ভুলিয়া যায় যে মাথার উপরে ধম আছেন— কিন্তু তোমাতে যে মণিকাঞ্চনযোগ। ধর্মকেও শক্ত করিয়া ধরিয়াছ, আবার কমের বধিতেও তুমি পাকা ।” তখন ব্যাবসা-খ্যাপা কালটাও পড়িয়াছিল। সকলেই সিথর করিয়াছিল, বাণিজ্য ছাড়া দেশের মুক্তি নাই ; এবং ইহাও নিশ্চিত কঝিয়াছিল যে, কেবলমাত্র মুলধনটার জোগাড় হইলেই উকিল মোক্তার ডাক্তার শিক্ষক ছাত্র এবং ছাত্রদের বাপ-দাদা সকলেই এক দিনেই সকলপ্রকার ব্যাবসা পরোদমে চালাইতে পারে। আমি প্রসন্নকে বলিলাম, “আমার সম্প্রবল নাই যে ।” সে বলিল, “বিলক্ষণ! তোমার পৈতৃক সম্পত্তির অভাব কী।" তখন হঠাৎ মনে হইল, প্রসন্ন তবে বুঝি এত দিন ধবিয়া আমার সঙ্গে একটা লম্ববা ঠাটা করিয়া আসিতেছে । প্রসন্ন কহিল, "ঠাটা নয় দাদা। সততাই তো লক্ষীর সোনার পদ্ম। লোকের বিশ্বাসের উপরই কারবার চলে, টাকায় নয়।” পিতার আমল হইতেই আমাদের বাড়িতে পাড়ার কোনো কোনো বিধবা মেয়ে টাকা গচ্ছিত রাখিত। তারা সদের আশা করিত না : কেবল এই বলিয়া নিশিচন্ত ছিল যে, মেয়েমানুষের সবারই ঠকিবার আশঙ্কা আছে, কেবল আমাদের ঘরেই নাই। সেই গচ্ছিত টাকা লইয়া স্বদেশী এজেন্সি খলিলাম। কাপড় কাগজ কালী বোতাম সাবান যতই আনাই বিক্তি হইয়া যায়—একেবারে পঙ্গপালের মতো থরিন্দার