পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ున 0 গল্পগুচ্ছ যে, সবোধের কাছে মুখ দেখানো আমার দায় হইল। প্রথমটা উহাকে এড়াইতে থাকিলাম, তার পর উহার উপরে বিষম রাগিতে আরম্ভ করিলাম। রাগিবার প্রথম উপলক্ষ হইল উহার স্বভাব। আমি নিজে ব্যস্তবাগীশ, সব কাজ তড়িঘড়ি করা আমার অভ্যাস। কিন্তু, সবোধের কী এক রকমের ভাব, উহাকে, প্রশ্ন করিলে হঠাৎ যেন উত্তর করিতেই পারে না— যেখানে সে আছে সেখানে যেন সে নাই, যেন সে আর কোথাও । রাস্তার ধারের জানলার গরাদে ধরিয়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাইয়া দেয় ; কী দেখে, কী ভাবে, তা সেই জানে। আমার এটা অসহ্য বোধ হয়। সবোধ বহনকাল হইতে র্যগণ মায়ের কাছে মানুষ, সমবয়সী খেলার সঙ্গী কেউ ছিল না; তাই সে বরাবর আপনার মনকে লইয়াই আপনি খেলা করিয়াছে। এই-সব ছেলের মশকিল এই যে, ইহারা যখন শোক পায় তখন ভালো করিয়া কাঁদিতেও জানে না, শোক ভুলিতেও জানে না। এইজন্যই সবোধকে ডাকিলে হঠাৎ সাড়া পাওয়া যাইত না, এবং কাজ করিতে বলিলে সে ভুলিয়া যাইত। তার জিনিসপত্র সে কেবলই হারাইত, তাহা লইয়া বকিলে চুপ করিযা মুখের দিকে চাহিযা থাকিত— যেন সেই চাহিযা থাকাই তার কান্না। আমি বলিতে লাগিলাম, এর দটিাত যে আমার ছেলের পক্ষে বড়ো খারাপ। আবার মুশকিল এই যে, ইহাকে দেখিয়া অবধি নিতার ইহাকে ভারি ভালো লাগিযাছে ; তবে প্রকৃতি সক্ষপণ অনারকম বলিয়াই ইহার প্রতি টানও যেন তাব বেশি হইল । পরের স্বভাব সংশোধন আমার কৌলিক কাজ ; ইহাতে আমার পটতাও যেমন উৎসাহও তেমনি। সবোধের স্বভাবটা কমপট নয় বলিয়াই আমি তাকে খািল কষিয়া কাজ করাইতে লাগিলাম। যতবারই সে ভুল করিত ততবারই নিজেকে দিয়া তার সে ভুল শোধরাইয়া লইতাম । আবার তার আর-এক অভ্যাস, সেটা তার মায়েরও ছিল— সে আপনাকে এবং আপনার চারি দিককে নানারকম করিয়া কল্পনা করিত। জানলার সামনেই যে জামরুল গাছ ছিল সেটাকে সে কী-একটা অদভূত নাম দিয়াছিল : সতীর কাছে শুনিয়াছি একলা দাঁড়াইয়া সেই গাছটার সঙ্গে সে কথা কহিত । বিছানাটাকে মাঠ, আর বালিশগলোকে গোরর পাল মনে করিয়া শোবার ঘরে বসিয়া রাখালি করাটা যে কত মিথ্যা, ইহা তার নিজের মুখে কবলে করাইবার অনেক চেষ্টা করিয়াছি— সে জবাবই করে না। আমি যতই তাকে শাসন করি আমার কাছে তার তটি ততই বাড়িয়া চলে। আমাকে দেখিলেই সে থতমত খাইয়া যায় ; আমার মাখের সাদা কথাটাও সে বুঝিতে পারে না। আর কিছ নয়, হাদয় যদি রাগ করিতে শরে করে এবং নিজেকে সামলাইবার মতো বাহির হইতে কোনো ধাক্কা যদি সে না পায় তবে রাগটা আপনাকে আপনিই বাড়াইয়া চলে নতন কারণের অপেক্ষা রাখে না। যদি এমন মানুষকে দ-চারবার মখে বলি যার জবাব দিবার সাধা নাই তবে সেই দু-চারবার বলাটাই পঞ্চম বারকার বলাটাকে সন্টি করে, কোনো উপকরণের দরকার হয় না। সবোধের উপর কেবলই বিরক্ত হইয়া ওঠা আমার মনের এমনি অভ্যাস হইয়াছিল যে, সেটা ত্যাগ করা আমার সাধাই ছিল না। এমনি করিয়া পাঁচ বছর কাটিল। সবোধের বয়স যখন বারো তখন তার