পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অপরিচিতা Գ O> নিভাঁর করিতে পারি। বিনন্দা ফিরিয়া আসিয়া বলিলেন, “মন্দ নয় হে ! থাটি সোনা বটে !” বিনদাদার ভাষাটা অত্যন্ত অটি। যেখানে আমরা বলি চমৎকার সেখানে তিনি বলেন "চলনসই । অতএব বুঝিলাম, আমার ভাগ্যে প্রজাপতির সঙ্গে পঞ্চশরের কোনো বিরোধ নাই । ९ বলা বাহুল্য, বিবাহ-উপলক্ষে কন্যাপক্ষকেই কলিকাতায় আসিতে হইল। কন্যার পিতা শম্ভুনাথবাব, হরিশকে কত বিশ্ববাস করেন তাহার প্রমাণ এই যে, বিবাহের তিন দিন পবে তিনি আমাকে প্রথম চক্ষে দেখেন এবং আশীবাদ করিয়া যান। বয়স তাঁর চল্লিশের কিছ এ পারে বা ও পারে । চুল কাঁচা, গোঁফে পাক ধরিতে আরম্ভ করিয়াছে মাত্র । স্পরষে বটে। ভিড়ের মধ্যে দেখিলে সকলের আগে তাঁর উপরে চোখ পড়িবার মতো চেহারা । 帶 আশা করি আমাকে দেখিয়া তিনি খুশি হইয়াছিলেন। বোঝা শক্ত, কেননা বড়োই চুপচাপ। যে দলটি-একটি কথা বলেন যেন তাহাতে পরা জোর দিয়া বলেন না। মামার মুখ তখন অনগ'ল ছটিতেছিল— ধনে মানে আমাদের স্থান যে শহরের কারও চেয়ে কম নয়, সেইটেকেই তিনি নানা প্রসঙ্গে প্রচার করিতেছিলেন। শম্ভুনাথবাব এ কথায় একেবারে যোগই দিলেন না— কোনো ফাঁকে একটা হ: বা হাঁ কিছুই শোনা গেল না। আমি হইলে দমিয়া যাইতাম, কিন্তু মামাকে দমানো শক্ত। তিনি শম্ভুনাথবাবরে চুপচাপ ভাব দেখিয়া ভাবিলেন লোকটা নিতান্ত নিজীব, একেবারে কোনো তেজ নাই। বেহাই-সম্প্রদায়ের আর যাই থাক, তেজ থাকাটা দোষের, অতএব মামা মনে মনে খুশি হইলেন। শম্প্রচুনাথবাব যখন উঠিলেন তখন মামা সংক্ষেপে উপর হইতেই তাঁকে বিদায় করিলেন, গাড়িতে তুলিয়া দিতে গেলেন না। পণ সম্বন্ধে দুই পক্ষে পাকাপাকি কথা ঠিক হইয়া গিয়াছিল। মামা নিজেকে অসামান্য চতুর বলিয়াই অভিমান করিয়া থাকেন। কথাবাতায় কোথাও তিনি কিছর ফাঁক রাখেন নাই। টাকার অঙ্ক তো স্থির ছিলই, তার পরে গহনা কত ভরির এবং সোনা কত দরের হইবে সেও একেবারে বাঁধাবধি হইয়া গিয়াছিল। আমি নিজে এ-সমস্ত কথার মধ্যে ছিলাম না; জানিতাম না দেনা-পাওনা কী শ্বির হইল। মনে জানিতাম, এই প্ৰথলে অংশটাও বিবাহের একটা প্রধান অংশ, এবং সে অংশের ভার যার উপরে তিনি এক কড়াও ঠকিবেন না। বস্তুত, আশ্চষ পাকা লোক বলিয়া মামা আমাদের সমস্ত সংসারের প্রধান গবের সামগ্রী । যেখানে আমাদের কোনো সম্প্ৰবন্ধ আছে সেখানে সবারই তিনি বধির লড়াইয়ে জিতিবেন, এ একেবারে ধরা কথা। এইজন্য আমাদের অভাব না থাকিলেও এবং অন্য পক্ষের অভাব কঠিন হইলেও জিতিব, আমাদের সংসারের এই জেদ— ইহাতে যে বাঁচুক আর যে মরকে । গায়ে-হলদে অসম্ভব রকম ধম করিয়া গেল। বাহক এত গেল যে তাহার আদম-সমারি করিতে হইলে কেরানি রাখিতে হয়। তাহাদিগকে বিদায় করিতে অপর পক্ষকে যে নাকাল হইতে হইবে, সেই কথা স্মরণ করিয়া মামার সঙ্গে মা একযোগে 8も