পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

«Η & Ο গল্পগুচ্ছ সানা হইল এই যে, সে যশস্বী মাস্টারমশায়দের মাথা হে’ট করিয়াছে। কিন্তু, এমন অসামান্য নিম্বফলতাতেও মাখনবাব হাল ছাড়িলেন না। দ্বিতীয় বছরে আরএক দল মাস্টার নিযুক্ত হইল; তাঁদের সঙ্গে রফা হইল এই যে, বেতন তো তাঁরা পাইবেনই, তার পরে বরদা যদি ফারস্ট ডিবিসনে পাস করিতে পারে তবে তাঁদের বকশিস মিলিবে। এবারেও বরদা যথাসময়ে ফেল করিত, কিন্তু এই আসন্ন দীঘটনাকে একটা বৈচিত্র্য বারা সরস করিবার অভিপ্রায়ে একজামিনের ঠিক আগের রাত্রে পাড়ার কবিরাজের সঙ্গে পরামর্শ করিয়া সে একটা কড়া রকমের জোলাপের বড়ি খাইল এবং ধন্বন্তরীর কৃপায় ফেল করিবার জন্য তাকে আর সেনেট-হল পৰ্যন্ত ছয়টিতে হইল না, বাড়ি বসিয়াই সে কাজটা বেশ সসম্পন্ন হইতে পারিল। রোগটা উচ্চ-অঙ্গের সাময়িক পত্রের মতো এমনি ঠিক দিনে ঠিক সময়ে প্রকাশ হইল যে, মাখন নিশ্চয় বঝিল এ কাজটা বিনা সম্পাদকতায় ঘটিতেই পারে না। এ সম্বন্ধে কোনো আলোচনা না করিয়া তিনি বরদাকে বলিলেন যে, তৃতীয়বার পরীক্ষার জন্য তাকে প্রস্তুত হইতে হইবে। অর্থাৎ তার সশ্রম কারাদণ্ডের মেয়াদ আরও একটা বছর বাড়িয়া গেল। অভিমানের মাথায় বরদা একদিন খাব ঘটা করিয়া ভাত খাইল না। তাহাতে ফল হইল এই, সন্ধ্যাবেলাকার খাবারটা তাকে আরও বেশি করিয়া খাইতে হইল। মাখনকে সে বাঘের মতো ভয় করিত, তব মরিয়া হইয়া তাঁকে গিয়া বলিল, “এখানে থাকলে আমার পড়াশুনো হবে না।” মাখন জিজ্ঞাসা করিলেন, “কোথায় গেলে সেই অসম্ভব ব্যাপার সম্ভব হতে পারবে ?” সে বলিল, “বিলাতে।” মাখন তাকে সংক্ষেপে বঝোইবার চেষ্টা করিলেন, এ সম্বন্ধে তার যে গোলটুকু আছে সে ভূগোলে নয়, সে মগজে। স্বপক্ষের প্রমাণস্বরপে বরদা বলিল, তারই একজন সতীর্থ এনট্রেন্স স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর শেষ বেঞ্চিটা হইতে একেবারে এক লাফে বিলাতের একটা বড়ো একজামিন মারিয়া আনিয়াছে। মাখন বলিলেন, বরদাকে বিলাতে পাঠাইতে তাঁর কোনো আপত্তি নাই কিন্তু তার আগে তার বি.এ. পাস করা চাই। এও তো বড়ো মুশকিল ! বি.এ. পাস না করিয়াও বরদা জমিয়াছে, বি. এ. পাস না করিলেও সে মরিবে, অথচ জন্মমৃত্যুর মাঝখানটাতে কোথাকার এই বি. এ. পাস বিধ্যপবতের মতো খাড়া হইয়া দাঁড়াইল ; নড়িতে-চড়িতে সকল কথায় ঐখানটাতে গিয়াই ঠোকর খাইতে হইবে ? কলিকালে অগসত্য মনি করিতেছেন কী। তিনিও কি জটা মড়াইয়া বি.এ. পাসে লাগিয়াছেন। খবে একটা বড়ো দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া বরদা বলিল, বার বার তিনবার ; এইবার কিন্তু শেষ। আর-একবার পেন্সিলের দাগ-দেওয়া কী-বইগলো তাকের উপর হইতে পাড়িয়া লইয়া বরদা কোমর বাঁধতে প্রবত্ত হইতেছে এমন সময় একটা আঘাত পাইল, সেটা আর তার সহিল না। স্কুলে যাইবার সময় গাড়ির খোঁজ করিতে গিয়া সে খবর পাইল যে, স্কুলে যাইবার গাড়ি-ঘোড়াটা মাখন বেচিয়া ফেলিয়াছেন। তিনি বলেন, “দই বছর লোকসান গেল, কত আর এই খরচ টানি!' স্কুলে হটিয়া যাওয়া বরদার পক্ষে