পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পয়লা নশ্বর 49డి যথোচিত হালকা করে দেখবার চেষ্টা করলাম। যেদিন আমার বিবাহ হয়েছিল সেইদিনকার কথাটা মনে করে শাক হাসি হাসলাম। মনে করলাম, মানুষ কত আকাঙ্ক্ষা, কত আয়োজন, কত আবেগের অপব্যয় করে থাকে। কত দিন, কত রাত্রি, কত বৎসর নিশিচন্ত মনে কেটে গেল; সন্ত্রী বলে একটা সজীব পদার্থ নিশ্চয় আছে বলে চোখ বাজে ছিলাম; এমন সময় আজ হঠাৎ চোখ থলে দেখি, বন্দবদ ফেটে গিয়েছে। গেছে যাক গে– কিন্তু, জগতে সবই তো বদবেদ নয়। যাগযুগান্তরের জন্মমৃত্যুকে অতিক্রম করে টিকে রয়েছে এমন-সব জিনসিকে আমি কি চিনতে শিখি নি। কিন্তু দেখলাম, হঠাৎ এই আঘাতে আমার মধ্যে নব্যকালের জ্ঞানীটা মছিত হয়ে পড়ল, আর কোন আদিকালের প্রাণীটা জেগে উঠে ক্ষুধায় কে’দে বেড়াতে লাগল। বারান্দায় ছাতে পায়চারি করতে করতে, শান্য বাড়িতে ঘরতে ঘরতে, শেষকালে, যেখানে জানালার কাছে কতদিন আমার সন্ত্রীকে একলা চুপ করে বসে থাকতে দেখেছি একদিন আমার সেই শোবার ঘরে গিয়ে পাগলের মতো সমস্ত জিনিসপত্র ঘাঁটতে লাগলম। অনিলের চুল বাঁধবার আয়নার দেরাজটা হঠাৎ টেনে খলতেই রেশমের লাল ফিতের বাঁধা এক-তাড়া চিঠি বেরিয়ে পড়ল। চিঠিগুলি পয়লানম্বর থেকে এসেছে। বকেটা জনলে উঠল। একবার মনে হল, সবগুলো পড়িয়ে ফেলি। কিন্তু, যেখানে বড়ো বেদনা সেইখানেই ভয়ংকর টান। এ চিঠিগুলো সমস্ত না পড়ে আমার থাকবার জো নেই। এই চিঠিগুলি পঞ্চাশবার পড়েছি। প্রথম চিঠিখানা তিন-চার টুকরো করে ছোড়া। মনে হল পাঠিকা পড়েই সেটি ছিড়ে ফেলে তার পরে আবার যত্ন করে একখানা কাগজের উপরে গাদ দিয়ে জড়ে রেখেছে। সে চিঠিখানা এই— আমার এ চিঠি না পড়েই যদি তুমি ছিড়ে ফেলো তব, আমার দঃখ নেই। আমার যা বলবার কথা তা আমাকে বলতেই হবে। আমি তোমাকে দেখেছি। এতদিন এই পৃথিবীতে চোখ মেলে বেড়াচ্ছি, কিন্তু, দেখবার মতো দেখা আমার জীবনে এই বত্রিশ বছর বয়সে প্রথম ঘটল । চোখের উপরে ঘুমের পদ টানা ছিল ; তুমি সোনার কাঠি ছাঁইয়ে দিয়েছ—আজ আমি নবজাগরণের ভিতর দিয়ে তোমাকে দেখলাম, ষে তুমি স্বয়ং তোমার সন্টিকতার পরম বিস্ময়ের ধন সেই অনিবাচনীয় তোমাকে । আমার যা পাবার তা পেয়েছি, আর কিছ চাই নে, কেবল তোমার স্তব তোমাকে শোনাতে চাই। যদি আমি কবি হতুম তা হলে আমার এই স্তব চিঠিতে তোমাকে লেখবার দরকার হত না, ছন্দের ভিতর দিয়ে সমস্ত জগতের কণ্ঠে তাকে প্রতিষ্ঠিত করে যে তুম। আমার এ চিঠির কোনো উত্তর দেবে না জানি–কিন্তু, আমাকে ভুল বাকো না। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারি, এমন সন্দেহমাত্র মনে না রেখে আমার পজা নীরবে গ্রহণ কোরো। আমার এই শ্রদ্ধাকে যদি তুমি শ্রদ্ধা করতে পার তাতে তোমারও ভালো হবে। আমি কে সে কথা লেখবার দরকার নেই, কিন্তু নিশ্চয়ই তা তোমার মনের কাছে গোপনে থাকবে না।’ এমন পচিশখানি চিঠি । এর কোনো চিঠির উত্তর যে অনিলের কাছ থেকে গিয়েছিল, এ চিঠিগুলির মধ্যে তার কোনো নিদশন নেই। যদি যেত তা হলে তখনি ఇ-ళాకా కాగా * శా జాగా శా হত।