পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ8Հ গল্পগুচ্ছ অর্থাৎ, যথেষ্টপরিমাণ সন্দরী না হলেও সাক্ষনার কারণ আছে। কথাটা পরম্পরায় আমার কানে উঠল। যে পণ্ডিতমশায়ের ধাতুর পকে বরাবর ভয় করে এসেছি তাঁরই কন্যার সঙ্গে আমার বিবাহের সম্ববন্ধ— এরই বিসদৃশতা আমার মনকে প্রথমেই প্রবল বেগে আকষণ করলে। রপেকথার গল্পের মতো হঠাৎ সবন্ত-প্রকরণ যেন তার সমস্ত অনস্বার-বিসগ ঝেড়ে ফেলে একেবারে রাজকন্যা হয়ে উঠল। একদিন বিকেলে মা তাঁর ঘরে আমাকে ডাকিয়ে বললেন, “সন, পণ্ডিতমশায়ের বাসা থেকে আম আর মিষ্টি এসেছে, খেয়ে দেখা ।” মা জানতেন, আমাকে পচিশটা আম খেতে দিলে আর-পাঁচিশটার বারা তার পাদপরণ করলে তবে আমার ছন্দ মেলে। তাই তিনি রসনার সরস পথ দিয়ে আমার হৃদয়কে আহবান করলেন। কাশীশ্বরী তাঁর কোলে বসেছিল। সমতি অনেকটা অপষ্ট হয়ে এসেছে, কিন্তু মনে আছে— রাঙতা দিয়ে তার খোঁপা মোড়া, আর গায়ে কলকাতার দোকানের এক সাটিনের জ্যাকেট— সেটা নীল এবং লাল এবং লেস এবং ফিতের একটা প্রত্যক্ষ প্রলাপ । যতটা মনে পড়ছে—রঙ শামলা ; ভুর জোড়া খুব ঘন ; এবং চোখদটো পোষা প্রাণীর মতো বিনা সংকোচে তাকিয়ে আছে। মাখের বাকি অংশ কিছই মনে পড়ে না— বোধ হয় বিধাতার কারখানায় তার গড়ন তখনো সারা হয় নি, কেবল একমেটে করে রাখা হয়েছে। আর যাই হোক, তাকে দেখতে নেহাত ভালোমানুষের মতো। আমার বকের ভিতরটা ফলে উঠল। মনে মনে বললাম, ঐ রাঙতা-জড়ানো বেণীওয়ালা জ্যাকেট-মোড়া সামগ্ৰীটি ষোলো-আনা আমার— আমি ওর প্রভু, আমি ওর দেবতা। অন্য সমস্ত দলভ সামগ্রীর জন্যেই সাধনা করতে হয়, কেবল এই একটি জিনিসের জন্য নয় ; আমি কড়ে আঙুল নড়ালেই হয়, বিধাতা এই বর দেবার জন্যে আমাকে সেধে বেড়াচ্ছেন। মাকে যে আমি বরাবর দেখে আসছি, স্ত্রী বলতে কী বোঝায় তা আমার ঐ সত্রে জানা ছিল। দেখেছি, বাবা অন্য-সমস্ত ব্লতের উপর চটা ছিলেন, কিন্তু সাবিত্রীরতের বেলায় তিনি মুখে যাই বলন, মনে মনে বেশ একটা আনন্দ বোধ করতেন। মা তাঁকে ভালোবাসতেন তা জানি; কিন্তু কিসে বাবা রাগ করবেন, কিসে তাঁর বিরক্তি হবে, এইটেকে মা যে একান্ত মনে ভয় করতেন, এরই রসটকু বাবা তাঁর সমস্ত পৌরষে দিয়ে সব চেয়ে উপভোগ করতেন। পজাতে দেবতাদের বোধ হয় বড়ো-একটা কিছু আসে যায় না, কেননা সেটা তাঁদের বৈধ বরান্দ। কিন্তু, মানুষের নাকি ওটা অবৈধ পাওনা, এইজন্যে ঐটের লোভে তাদের অসামাল করে। সেই বালিকার রপেগণের টান সেদিন আমার উপরে পৌছয় নি, কিন্তু আমি যে পাজনীয় সে কথাটা সেই চোদ্দ বছর বয়সে আমার পরেষের রক্তে গজিয়ে উঠল। সেদিন খাব গৌরবের সঙ্গেই আমগুলো খেলম, এমন-কি সগবে তিনটে আম পাতে বাকি রাখলাম, যা আমার জীবনে কখনো ঘটে নি; এবং তার জন্যে সমস্ত অপরাহুকালটা অনুশোচনায় গেল। সেদিন কাশীশ্বরী খবর পায় নি আমার সঙ্গে তার সম্বন্ধটা কোন শ্রেণীর— কিন্তু বাড়ি গিয়েই বোধ হয় জানতে পেরেছিল। তার পরে যখনই তার সঙ্গে দেখা হত সে শশব্যস্ত হয়ে লকোবার জায়গা পেত না। আমাকে দেখে তার এই গ্রস্ততা