পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

a8bf গল্পগছে খেয়েছি, রাত্রে ডিনারের পর মেয়েদের সঙ্গে হাইস্ট খেলেছি, তাদের মৰে বিলেতের একেবারে খাস মহলের ইংরেজি ভাষার কথাবাতা শানেছি। আমার মশকিল এই যে, র্যাসেলস ডেজার্টেড ভিলেজ এবং অ্যাডিসন স্টীল পড়ে আমি ইংরেজি পাকিয়েছি, এই মেয়েদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া আমার কম নয়। O my, O dear O dear প্রভৃতি উদ্ভাষণগুলো আমার মুখ দিয়ে ঠিক সরে বেরোতেই চায় না। আমার যতটুকু বিদ্যা তাতে আমি অত্যন্ত হাল ইংরেজি ভাষায় বড়োজোর হাটেবাজারে কেনা-বেচা করতে পারি, কিন্তু বিংশশতাব্দীর ইংরেজিতে প্রেমালাপ করার কথা মনে করলে আমার প্রেমই দৌড় মারে। অথচ এদের মথে বাংলাভাষার যেরকম দভিক্ষ তাতে এদের সঙ্গে খাঁটি বকিমি সরে মধরালাপ করতে গেলে ঠকতে হবে। তাতে মজুরি পোষাবে না। তা যাই হোক, এই-সব বিলিতি-গিলটি-করা মেয়ে একদিন আমার পক্ষে সুলভ হয়েছিল। কিন্তু, রন্ধ দরজার ফাঁকের থেকে যে মায়াপরী দেখেছিলম দরজা যখন খলল তখন আর তার ঠিকানা পেলাম না। তখন আমার কেবল মনে হতে লাগল, সেই-যে আমার ব্ৰতচারিণী নিরর্থক নিয়মেব নিরন্তর পুনরাবৃত্তির পাকে অহোরাত্র ঘরে ঘরে আপনার জড়বুদ্ধিকে তৃপ্ত করত, এই মেয়েরাও ঠিক সেই বন্ধি নিয়েই বিলিতি চালচলন আদবকায়দার সমস্ত তুচ্ছাতিতুচ্ছ উপসগগুলিকে প্রদক্ষিণ করে দিনের পর দিন, বৎসরের পর বৎসর অনায়াসে অক্লান্তচিত্তে কাটিয়ে দিচ্ছে। তারাও যেমন ছোঁয়া ও নাওয়ার লেশমাত্র পখলন দেখলে অশ্রদ্ধায় কণ্টকিত হয়ে উঠত, এরাও তেমনি একসেপ্টের একটা খত কিবা কাঁটা-চামচের অলপ বিপৰ্যয় দেখলে ঠিক তেমনি করেই অপরাধীর মনুষ্যত্ব সম্বন্ধে সন্দিহান হয়ে ওঠে। তারা দিশি পুতুল, এরা বিলিতি পর্তুল । মনের গতিবেগে এরা চলে না, অভ্যাসের-দম-দেওয়া কলে এদের চালায় । ফল হল এই যে, মেয়ে জাতের উপরেই আমার মনে মনে অশ্রদ্ধা জন্মালো ; আমি ঠিক করলাম, ওদের বধি যখন কম তখন সান-আচমন-উপবাসের অকম-কান্ড প্রকান্ড না হলে ওরা বাঁচে কণী করে । বইয়ে পড়েছি, একরকম জীবাণ আছে সে কুমাগতই ঘোরে। কিন্তু, মানুষ ঘোরে না, মানুষ চলে। সেই জীবাণর পরিবর্ধিত সংস্করণের সঙ্গেই কি বিধাতা হতভাগ্য পরষমানুষের বিবাহের সম্ববন্ধ পাতিয়েছেন। এ দিকে বয়স যত বাড়তে চলল বিবাহ সম্প্রবন্ধে বিধাও তত বেড়ে উঠল। মানুষের একটা বয়স আছে যখন সে চিন্তা না করেও বিবাহ করতে পারে। সে বয়স পেরোলে বিবাহ করতে দুঃসাহসিকতার দরকার হয়। আমি সেই বেপরোয়া দলের লোক নই। তা ছাড়া কোনো প্রকৃতিস্থ মেয়ে বিনা কারণে এক নিশবাসে আমাকে কেন যে বিয়ে করে ফেলবে, আমি তা কিছুতেই ভেবে পাই নে। শুনেছি ভালোবাসা অন্ধ, কিন্তু এখানে সেই অন্ধের উপর তো কোনো ভার নেই। সংসারবন্ধির দটো চোখের চেয়ে আরও বেশি চোখ আছে—সেই চক্ষ যখন বিনা নেশায় আমার দিকে তাকিয়ে দেখে তখন আমার মধ্যে কী দেখতে পায় আমি তাই ভাবি। আমার গণ নিশ্চয়ই অনেক আছে, কিন্তু সেগুলো তো ধরা পড়তে দেরি লাগে, এক চাহনিতেই বোঝা যায় না। আমার নাসার মধ্যে যে খবতা আছে বন্ধির উন্নতি তা পরণ করেছে জানি : কিন্তু নাসাটাই থাকে প্রত্যক্ষ হয়ে, আর ভগবান বন্ধিকে নিরাকার করে রেখে দিলেন। যাই হোক, যখন দেখি কোনো সাবালক মেয়ে অত্যক্ষপ কালের নোটিশেই আমাকে