পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૧૮: ર গল্পগুচ্ছ “বলবেন, লোকটা অন্য সাধারণ মানুষের মতো দোষে গণে জড়িত। দোষ এত বেশি নেই ষে ভাবনা হতে পারে; গণও এত বেশি নেই যে লোভ করা চলে। আমি যতদর জানি তাতে কন্যার পিতামাতারা তাকে বিশেষ পছন্দ করে, স্বয়ং কন্যাদের মনের কথা ঠিক জানা যায় নি।” বিশ্বপতিবাব এই ব্যাপারে যখন অত্যন্ত কৃতজ্ঞ হলেন তখন তাঁর উপরে আমার ভক্তি বেড়ে গেল। যে কারবারে ইতিপবে তাঁর সঙ্গে আমার দরে বনছিল না, সেটাতে লোকসান দিয়েও রেজিসী দলিল সই করবার জন্যে আমার উৎসাহ হল। তিনি যাবার সময় বলে গেলেন, “পাত্রটিকে বলবেন, অন্য সব বিষয়ে যাই হোক, এমন গুণবতী মেয়ে কোথাও পাবেন না।” যে মেয়ে সমাজের আশ্রয় থেকে এবং শ্রদ্ধা থেকে বন্চিত তাকে যদি হৃদয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত করা যায় তা হলে সে মেয়ে কি আপনাকে উৎসগ করতে কিছুমাত্র কৃপণতা করবে। যে মেয়ের বড়ো রকমের আশা আছে তারই আশার অন্ত থাকে না। কিন্তু, এই দীপালির দীপটি মাটির, তাই আমার মতো মেটে ঘরের কোণে তার শিখাটির অমযাদা হবে না । সন্ধ্যার সময় আলো জেলে বিলিতি কাগজ পড়ছি, এমন সময় খবর এল, একটি মেয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে । বাড়িতে সত্রীলোক কেউ নেই, তাই ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। কোনো ভদ্র উপায় উদ্ভাবনের পবেই মেয়েটি ঘরের মধ্যে ঢুকে প্রণাম করলে। বাইরে থেকে কেউ বিশ্বাস করবে না, কিন্তু আমি অত্যন্ত লাজকে মানষে । আমি না তার মুখের দিকে চাইলাম, না তাকে কোনো কথা বললাম। সে বললে, “আমার নাম দীপালি।” গলাটি ভারি মিষ্টি। সাহস করে মুখের দিকে চেয়ে দেখলাম, সে মুখ বধিতে কোমলতাতে মাখানো। মাথায় ঘোমটা নেই– সাদা দিশি কাপড়, এখনকাব ফ্যাশানে পরা। কী বলি ভাবছি, এমন সময় সে বললে, “আমাকে বিবাহ দেবার জন্যে আপনি কোনো চেস্টা করবেন না।” আর যাই হোক, দীপালির মুখে এমন আপত্তি আমি প্রত্যাশাই করি নি। আমি ভেবে রেখেছিলাম, বিবাহের প্রস্তাবে তার দেহ মন প্রাণ কৃতজ্ঞতায় ভরে উঠেছে। জিজ্ঞাসা করলাম, “জানা অজানা কোনো পারকেই তুমি বিবাহ করবে না ?” সে বললে, “না, কোনো পালকেই না।” যদিচ মনস্তত্ত্বের চেয়ে বস্তুতত্ত্বেই আমার অভিজ্ঞতা বেশি-বিশেষত নারীচিত্ত আমার কাছে বাংলা বানানের চেয়ে কঠিন, তব কথাটার সাদা অর্থ আমার কাছে সত্য অথ বলে মনে হল না। আমি বললাম, “যে পায় আমি তোমার জন্যে বেছোঁচ সে অবজ্ঞা করবার যোগ্য নয় ।” জিজ্ঞাসা করলাম, “জানা অজানা কোনো পারকেই তুমি বিবাহ করবে না ?” আমি বললাম, “সে লোকটিও তোমাকে মনের সঙ্গো শ্রদ্ধা করে।” “কিন্তু না, আমাকে বিবাহ করতে বলবেন না।” *আচ্ছা, বলব না, কিন্তু আমি কি তোমাদের কোনো কাজে লাগতে পারি নে।” “আমাকে যদি কোনো মেয়ে-ইস্কুলে পড়াবার কাজ জটিয়ে দিয়ে এখান থেকে কলকাতায় নিয়ে যান তা হলে ভারি উপকার হয় ।”