পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নামঙ্গরে গল্প Q●● চলে এলেন। আমি হেসে বললেম, “তোমার স্নেহগঙ্গার ধারাকে পশ্চিম থেকে প্রবে: বহন করে এনেছি, আমি কলির ভগীরথ ।” পিসিমা হাসলেন, আর চোখের জল মাছলেন। তাঁর মনের মধ্যে কিছু বিধাও হল, বললেন, “অনেক দিন থেকে ইচ্ছে ছিল, মেয়েটার কোনো-একটা গতি করে শেষ বয়সে তীর্থ করে বেড়াব—কিন্তু, বাবা, আজ যে তার উলেটা পথে টেনে নিয়ে চললি।” আমি বললাম, “পিসিমা, আমিই তোমার সচল তীখ। যে-কোনো ত্যাগের ক্ষেত্রেই তুমি আত্মদান করা-না কেন, সেইখানেই তোমার দেবতা আপনি এসে তা গ্রহণ করবেন। তোমার যে পণ্য আত্মা।” * সব চেয়ে একটা যান্তি তাঁর মনে প্রবল হল। তাঁর আশঙ্কা ছিল, স্বভাবতই আমার প্রবত্তির ঝোঁকটা আণ্ডামান-মাখো, অতএব কেউ আমাকে সামলাবার না থাকলে অবশেষে একদিন পলিসের বাহবন্ধনে বন্ধ হবই। তাঁর মতলব ছিল, যে কোমল বাহবন্ধন তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন ও পথায়ী আমার জন্য তারই ব্যবস্থা করে দিয়ে তবে তিনি তীর্থভ্রমণে বার হবেন। আমার বন্ধন নইলে তাঁর মন্তি নেই। আমার চরিত্র সম্প্রবন্ধে এইখানে ভুল হিসেব করেছিলেন। কুঠিতে আমার বধবন্ধনের গ্রহটি অতিমে আমাকে শকুনিগধিনীর হাতে সাপে দিতে নারাজ ছিলেন না, কিন্তু প্রজাপতির হাতে নৈব নৈব চ। কন্যাকতারা তনটি করেন নি, তাঁদের সংখ্যাও অজস্র। আমার পৈতৃক সম্পত্তির বিপুল সচ্ছলতার কথা সকলেই জানত ; অতএব, ইচ্ছা করলে সম্ভবপর শ্বশুরকে দেউলে করে দিয়ে কন্যার সঙ্গে সঙ্গে বিশ-পচিশ হাজার টাকা নহবতে সাহানা বাজিয়ে হাসতে হাসতে আদায় করতে পারতেম। করি নি। আমার ভাবী চরিত-লেখক এ কথা যেন সমরণ রাখেন যে, স্বদেশসেবার সংকল্পের কাছে এককালীন আমার এই বিশ-পচিশ হাজার টাকার ত্যাগ। জমা খরচের অঙ্কটা আঁদশ্য কালীতে লেখা আছে বলে যেন আমার প্রশংসার হিসাব থেকে বাদ না পড়ে। পিতামহ ভীমের সঙ্গে আমার মহৎ চরিত্রের এইখানে মিল আছে। পিসিমা শেষ পর্যন্ত আশা ছাড়েন নি। এমন সময়ে ভারতের পোলিটিক্যাল আকাশে আমাদের সেই ক্ষারযাগের পরবতী যাগের হাওয়া বইল। পবেই বলেছি, এখনকার পালায় আমরা প্রধান নায়ক নই, তব ফট-লাইটের অনেক পিছনে মাঝে মাঝে নিস্তেজভাবে আমাদের আসা-যাওয়া চলছে। এত নিস্তেজ যে, পিসিমা আমার সম্প্রবন্ধে নিশিচন্তই ছিলেন। আমার জনে কালীঘাটে বস্তায়ন করবার ইচ্ছে এক কালে তাঁর ছিল, কিন্তু ইদানিং আমার ভাগ্য-আকাশে লাল-পাগড়ির রক্তমেঘ একেবারে অদশ্য থাকাতে তাঁর আর খেয়াল রইল না। এইটেই ভুল করলেন। সেদিন পজোর বাজারে ছিল খন্দরের পিকেটিং। নিতান্ত কেবল দশকের মতন গিয়েছিলেম— আমার উৎসাহের তাপমাত্রা ১৮ অকেরও নীচে ছিল, নাড়ীতে বেশি বেগ ছিল না। সেদিন যে আমার কোনো আশঙ্কার কারণ থাকতে পারে সে খবর আমার কুঠির নক্ষত্র ছাড়া আর-সবার কাছে ছিল অগোচর। এমন সময় খন্দরপ্রচারকারিণী কোনো বাঙালি মহিলাকে পলিস সাজ’ন দিলে ধাক্কা। মহাতের মধ্যেই আমার অহিংস অসহযোগের ভাবখানা প্রবল দঃেসহযোগে পরিণত হল। সতরাং অনতিবিলবে থানায় হল আমার গতি। তার পরে যথানিয়মে হাজতের লালায়িত কবলের থেকে জেলখানার অন্ধকার জঠরদেশে অবতরণ করা গেল। পিসিমাকে বলে গেলেম, “এইবার