পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংস্কার aも@ মা, বরঞ্চ বাড়ে, এমনি একটা রব উঠেছিল। সহধর্মিণীর সদদষ্টান্ত ও নিরন্তর তাগিদ সত্ত্বেও আমি খন্দর পরি নে; তার কারণ এ নয় যে, খন্দরে কোনো দোষ আছে বা গণ নেই, বা বেশভূষায় আমি শৌখিন। একেবারে উল্টো— বাদেশিক চাল-চলনের বিরদ্ধে অনেক অপরাধ আমার আছে, কিন্তু পরিচ্ছন্নতা তার অন্তগত নয়। ময়লা মোটা রকমের সাজ, আল-থাল রকমে ব.বহার করাটাই আমার অভ্যাস। কলিকার ভাবান্তর ঘটবার পববতী যুগে চীনেবাজারের আগা-চওড়া জুতো পরতুম, সে জুতোয় প্রতিদিন কালিমা-লেপন করিয়ে নিতে ভুলতুম, মোজা পরতে আপদ বোধ হত, শার্ট না পরে পাঞ্জাবি পরতে আরাম পেতুম, আর সেই পাঞ্জাবিতে দুটো-একটা বোতামের অভাব ঘটলেও খেয়াল করতুম না— ইত্যাদি কারণে কলিকার সঙ্গে আমার সম্পণে বিচ্ছেদ হবার আশন্কা ঘটেছিল । সে বলত, “দেখো, তোমার সঙ্গে কোথাও বেরোতে আমার লক্ষজা করে ।” আমি বলতুম, “আমার অনুগত হবার দরকার নেই, আমাকে বাদ দিয়েই তুমি সুবরিয়ো ।” আজ যুগের পরিবতন হয়েছে, আমার ভাগ্যের পরিবতন হয় নি। আজও কলিকা বলে, তোমার সঙ্গে বেরোতে আমার লক্ত করে ।” তখন কলিকা যে দলে ছিল তাদের উদি আমি ব্যবহার করি নি, আজ যে দলে ভিড়েছে তাদের উদিও গ্রহণ করতে পাবলম না। আমাকে নিয়ে আমার সীর লঙ্গজ সমানই রয়ে গেল। এটা আমারই সবভাবের দোষ । যে-কোনো দলেরই হোক, ভেক ধারণ করতে আমার সংকোচ লাগে । কিছুতেই এটা কাটাতে পারলম না । অপর পক্ষে মতান্তর জিনিসটা কলিকা খতম ক'রে মেনে নিতে পারে না । ঋনার ধারা যেমন মোটা পাথরটাকে বারে বারে ঘরে ফিবে তক্তন করে ব্যথা ঠেলা দিতেই থাকে, তেমনি ভিন্ন রচিকে চলতে ফিরতে দিনে রাত্রে ঠেলা না দিয়ে কলিকা থাকতে পারে না : পথিক মত নামক পদার্থের সংস্পশমাত্র ওর সনায়তে যেন দুনিবারভাবে সড়সুড়ি লাগায়, ওকে একেবারে চটফটিয়ে তোলে। কাল চায়ের নিমন্ত্রণে যাবাব পাবেই আমার নিষখন্দর বেশ নিয়ে একসহস্ৰএকতম বার কলিকা যে আলোচনা উথাপিত করেছিল তাতে তার কন্ঠস্বরে মাধ্যমাত্র ছিল না। বন্ধির অভিমান থাকাতে বিনা তকে তার ভংসনা শিরোধাষ করে নিতে পারি নি – স্বভাবের প্রবতনয়ে মানুষকে এত বাথ চেষ্টাতেও উৎসাহিত করে। তাই আমিও একসহস্র-একতম বার কলিকাকে খোঁটা দিয়ে বললাম, “মেয়েরা বিধিদত্ত চোখটার উপর কালাপেড়ে মোটা ঘোমটা টেনে আচারের সঙ্গে অচিলের গটি বোধে চলে। মননের চেয়ে মাননেই তাদের আরাম । জীবনের সকল ব্যবহারকেই রচি ও বধির স্বাধীন ক্ষেত্র থেকে সরিয়ে নিয়ে সংস্কারের জেনানায় পদানশীন করতে পারলে তারা বাঁচে । আমাদের এই আচারজীণ দেশে খন্দর-পরাটা সেইরকম মালাতিলকধারী ধামিকতার মতোই একটা সংস্কারে পরিণত হতে চলেছে বলেই মেয়েদের ওতে এত আনন্দ ।” কলিকা রেগে অস্থির হয়ে উঠল। তার আওয়াজ শুনে পাশের ঘর থেকে দাসীটা মনে করলে ভাষাকে পরো ওজনের গয়না দিতে ভতৰ্ণ বুঝি ফাঁকি দিয়েছে। কলিকা