পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ উকিল। আর, আপনার সাত মেয়ে, এক ছেলে, তার মধ্যে দটি মেয়ে বিবাহ যোগ্যা । ফকির। আজ্ঞে, আপনি আমার চেয়ে ঢের বেশি জানেন, দেখতে পাচ্ছি। উকিল। আপনার এই বহৎ পরিবারের ভরণপোষণের ভার আপনি যদি না নেন, তবে আপনার অনাথিনী দই সত্ৰী আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করবেন, পাবে হতে বলে রাখলাম। ফকির সব চেয়ে আদালতকে ভয় করিত। তাহার জানা ছিল, উকিলেরা জেরা করিবার সময় মহাপরাষদিগের মানমযাদা-গাভীষকে খাতির করে না, প্রকাশ্যে অপমান করে, এবং খবরের কাগজে তাহার রিপোর্ট বাহির হয়। ফকির অশ্রুসিক্সলোচনে উকিলকে বিস্তারিত আত্মপরিচয় দিতে চেষ্টা করিল— উকিল তাহার চাতুরীর, তাহার উপস্থিতবন্ধির, তাহার মিথ্যা গল্প রচনার অসাধারণ ক্ষমতার ভূয়োভূয়: প্রশংসা করিতে লাগিল। শনিয়া ফকিরের আপন হস্তপদ দংশন করিতে ইচ্ছা করিতে লাগিল । ষষ্ঠীচরণ ফকিরকে পনশ্চ পলায়নোদ্যত দেখিযা শোকে অধীর হইয়া পড়িল । পাড়ার লোকে তাহাকে চারি দিকে ঘিরিয়া অজস্র গালি দিল, এবং উকিল তাহাকে এমন শাসাইল যে তাহার মুখে আর কথা রহিল না। ইহাব উপর যখন আটজন বালকবালিকা গাঢ় স্নেহে তাহাকে চারি দিকে আলিঙ্গন করিয়া ধরিয়া তাহার শবাসরোধ করিবার উপক্ৰম করিল, তখন অন্তরালসিথত হৈমবতী হাসিবে কি কাঁদিবে ভাবিয়া পাইল না । ফকির অন্য উপায না দেখিয়া ইতিমধ্যে নিজের পিতাকে একখানা চিঠি লিখিয়া সমস্ত অবস্থা নিবেদন করিয়াছিল। সেই পত্র পাইযা ফকিরের পিতা হরিচরণবাব আসিয়া উপসিথত। পাড়ার লোক, জমিদার এবং উকিল কিছুতেই দখল ছাড়ে না। এ লোকটি যে ফকির নহে, মাখন, তাহাবা তাহার সহস্ৰ অকাট্য প্রমাণ প্রয়োগ করিল— এমনকি, যে ধাত্রী মাখনকে মানুষ করিয়াছিল সেই বাড়িকে আনিয়া হাজির করিল। সে কম্পিত হতে ফকিরের চিবকে তুলিয়া ধরিয়া নখে নিরীক্ষণ করিযা তাহার দাড়ির উপরে দরবিগলিত ধারায় আশ্রপোত করিতে লাগিল। যখন দেখিল তাহাতেও ফকির রাশ মানে না, তখন ঘোমটা টানিষা দুই সী আসিয়া উপসিথত হইল। পাড়ার লোকেরা শশব্যস্ত হইয়া ঘরের বাহিরে চলিয়া গেল । কেবল দুই বাপ, ফকির এবং শিশুরা ঘরে রহিল। দই সত্ৰী হাত নাড়িয়া নাড়িয়া ফকিরকে জিজ্ঞাসা করিল, "কোন চুলোয়, যমের কোন দায়োরে যাবার ইচ্ছে হয়েছে।” ফকির তাহা নিদিষ্ট কবিয়া বলিতে পারিল না, সতরাং নিরহের হইয়া রহিল। কিন্তু ভাবে ষেরপ প্রকাশ পাইল তাহাতে যমের কোনো বিশেষ নোবেল প্রতি তাহার যে বিশেষ পক্ষপাত আছে এরুপ বোধ হইল না : আপাতত যে-কোনো একটা বার পাইলেই সে বাঁচে, কেবল একবার বাহির হইতে পারিলেই হস । তখন আর-একটি রমণীমতি গহে প্রবেশ করিয়া ফকিরকে প্রণাম করিল। ফকির প্রথমে অবাক, তাহার পরে আনন্দে উৎফল্পে হইয়া উঠিয়া বলিল, “এ যে হৈমবতী!”