পাতা:গল্পগুচ্ছ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գ Ե` গল্পগুচ্ছ ত্যাগ প্রথম পরিচ্ছেদ ফাগানের প্রথম পণিমায় আমম কুলের গন্ধ লইয়া নব বসন্তের বাতাস বহিতেছে। পাকরিণীতীরের একটি পরাতন লিচু গাছের ঘন পল্লবের মধ্য হইতে একটি নিদ্রাহীন অশ্রান্ত পাপিয়ার গান মখোজেদের বাড়ির একটি নিদ্রাহীন শয়নগহের মধ্যে গিয়া প্রবেশ করিতেছে। হেমন্ত কিছু চঞ্চলভাবে কখনো তার স্ত্রীর একগুচ্ছ চুল খোপা হইতে বিশিলষ্ট করিয়া লইয়া আঙলে জড়াইতেছে, কখনো তাহার বালাতে চুড়িতে সংঘাত করিয়া ঠুং ঠাং শব্দ করিতেছে, কখনো তাহার মাথার ফলের মালাটা টানিয়া অবস্থানচ্যুত করিয়া তাহার মুখের উপর আনিয়া ফেলিতেছে। সন্ধ্যাবেলাকার নিস্তব্ধ ফলের গাছটিকে সচেতন করিয়া তুলিবার জন্য বাতাস যেমন একবার এ পাশ হইতে একবার ও পাশ হইতে একট-আধট নাড়াচাড়া করিতে থাকে, হেমন্তের কতকটা সেই ভাব । কিন্তু, কসম সম্মুখের চন্দ্রলোকপলাবিত অসীম শ্যন্যের মধ্যে দুই নেত্রকে নিমগন করিয়া দিয়া সিথর হইয়া বসিয়া আছে। স্বামীব চঞ্চল্য তাহাকে সপশ করিয়া প্রতিহত হইয়া ফিবিয়া যাইতেছে। অবশেষে হেমন্ত কিছ: অধীরভাবে কুসুমের দুই হাত নাড়া দিয়া বলিল, “কুসুম, তুমি আছ কোথায় । তোমাকে যেন একটা মস্ত দরবীন কষিয়া বিস্তব ঠাহর করিয়া বিন্দমাত্র দেখা যাইবে, এমনি দরে গিয়া পড়িয়াছ। আমার ইচ্ছা, তুমি আজ একট কাছাকাছি এসো। দেখো দেখি, কেমন চমৎকার রাত্রি।” কুসুম শান্য হইতে মুখ ফিরাইয়া লইযা সবামীর মুখের দিকে রাখিয়া কহিল, “এই জ্যোৎসনারাত্রি, এই বসন্তকাল, সমস্ত এই মহেনতে মিথ্যা হইয়া ভাঙিয়া যাইতে পারে এমন একটা মন্ত্র আমি জানি।” হেমন্ত বলিল, “যদি জান তো সেটা উচ্চারণ কবিয়া কাক্ত নাই। বরং এমন যদি কোনো মন্ত্র জানা থাকে যাহাতে সপ্তাহের মধ্যে তিনটে চারটে পবিবাব আসে কিম্বলা রাত্রিটা বিকাল পাঁচটা সাড়ে-পাঁচটা পৰ্যন্ত টিকিয়া যায় তো তাহা শনিতে রাজি আছি।" বলিয়া কুসুমকে আর-একটা টানিয়া লইতে চেষ্টা করিল। কুসমে সে আলিঙ্গনপাশে ধরা না দিয়া কহিল, "আমার মৃত্যুকালে তোমাকে যে কথাটা সলিব আমাকে যত শাসিত দাও-না কেন, আমি বহন করিতে পারিব।” শাসিত সম্বন্ধে জয়দেব হইতে শেলাক আওড়াইয়া হেমলত একটা রসিকতা করিবার উদ্যোগ করিতেছিল। এমন সময়ে শোনা গেল একটা কন্ধ চটিজতার চটচট শব্দ নিকটবতী হইতেছে। হেমন্তের পিতা হরিহর মখোল্ডের পরিচিত পদশব্দ । হেমন্ত শশব্যস্ত হইয়া উঠিল। হরিহর বারের নিকটে আসিযা ক্লন্ধে গজৰ্কন কহিল, "হেমলত, বউকে এখনি বাড়ি হইতে দরে করিয়া দাও।” হেমন্ত সীর মাখের দিকে চাহিল; সন্ত্রী কিছুই বিস্ময় প্রকাশ করিল না, কেবল