পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 Rigg মিলিয়ে “রামনাম সৎ হয়” “রামনাম সৎ হয়” এই মন্ত্র অবিরাম আউড়ে যেতে লাগলেন। তাই শুনে আমার মনে হল যে আমার মৃত্যু হয়েছে, আর ভূতেরা পাৰ্লিতে চড়িয়ে আমাকে প্রেতিপুৱীতে নিয়ে যাচ্ছে! এ ধারণার মূলে আমার অন্তরস্থ গঞ্জিকাধুমের কোনও প্রভাব ছিল। কিনা জানিনে । এরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জানিবার জন্য আমার মহা-কৌতুহল হল। আমি বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখি, গ্রামে আগুন লাগলে যে রকম হয়, আকাশের চেহারা সেই রকম হয়েছে, অথচ আগুন লাগাবার অপর লক্ষণ,--আকাশ-ষোড়া হৈ হৈ রৈ রৈ শব্দ শুনতে পেলুম না। চারিদিক এমন নির্জন, এমন নিস্তব্ধ যে, মনে হল মৃত্যুর অটল শান্তি যেন বিশ্বচরাচরকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে । তারপর পান্ধি আর একটু অগ্রসর হলে দেখলুম যে, সুমুখে যা পড়ে আছে তা একটি মরুভূমি —-বালির নয়, পোড়ামাটির,-সে মাটি পাতখোলার মত, তার গায়ে একটি তৃণ পর্যন্ত নেই। এই পোড়ামাটির উপরে মানুষের এখন বসবাস নেই, কিন্তু পূর্বে যে ছিল, তার অসংখ্য এবং অপর্যাপ্ত চিহ্ন চারিদিকে চড়ান রয়েছে। এ যেন ইটের রাজ্য। যতদূর চােখ যায়, দেখি শুধু ইট আর ইট, কোথায়ও বা তা গাদা হয়ে রয়েছে, কোথায়ও বা হাজারে হাজারে মাটির উপর বেছান রয়েছে ; আর সে ইট এত লাল যে, দেখতে মনে হয় টাটক রক্ত যেন চাপ বেঁধে গেছে ; এই ভূতলশায়ী জনপদের ভিতর থেকে যা আকাশের দিকে ঠেলে উঠেছে, সে হচ্ছে গাছ ; কিন্তু তার একটিতেও পাতা নেই, সব নেড়া, সব শুকনো, সব মরা। এই গাছের কঙ্কালগুলি কোথাও বা দল বেঁধে দাড়িয়ে আছে, কোথাও বা দু’ একটি একধারে আলগোছ হয়ে রয়েছে। আর এই ইট, কাঠ, মাটি, আকাশের সর্বাঙ্গে যেন রক্তবর্ণ আগুন জড়িয়ে রয়েছে। এ দৃশ্য দেখে বেহারাদের প্রকৃতির লোকের ভয় পাওয়াটা কিছু আশ্চর্যের বিষয় নয়, কেননা আমারই গা ছম চাম করতে লাগল। খানিকক্ষণ পরে এই নিস্তব্ধতার বুকের ভিতর থেকে একটি অতি ক্ষীণ । ক্ৰন্দনধ্বনি আমার কাণে এল। সে স্বর এত মৃদু, এত করুণ, এত । কাতর যে, মনে হল সে সুরের মধ্যে যেন মানুষের যুগযুগান্তর বেদনা