পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আহুতি as দর্শন করতে যেতেন। সে সময়ে তীর আগে পিছে পাঠানপাড়ার দুজন লাঠিয়াল তাঁর রক্ষক হিসেবে থাকত। রত্নময়ীর বয়স তখন বিশ কিংবা একুশ। তাঁর মত অপূর্বসুন্দরী স্ত্রীলোক আমাদের দেশে লাখে একটি দেখা যায়। তাঁর মূর্তি সিংহবাহিনীর প্রতিমার মত ছিল, এবং সেই প্রতিমার মতই উপরের দিকে কোণতোলা তার চোখ দুটি, দেবতার চোখের মতই স্থির ও নিশ্চল ছিল। লোকে বলত সে চােখে কখনও পলক পড়েনি। সে চােখের ভিতরে যা জাজ্জ্বল্যমান হয়ে উঠেছিল, সে হচ্ছে চারপাশের নরনারীর উপর তীর অগাধ অবজ্ঞ। রত্নময়ী তার কা পূর্বপুরুষদের তিনশত বৎসরের সঞ্চিত অহঙ্কার উত্তরাধিকারী স্বত্বে লাভ করেছিলেন। বলা বাহুল্য, রত্নময়ীর অন্তরে তার রূপেরও অসাধারণ অহংকার ছিল। কেননা তার কাছে সে রূপ ছিল তার আভিজাত্যের প্রত্যক্ষ নিদর্শন। রত্নময়ীর মতে রূপের উদ্দেশ্য মানুষকে আকর্ষণ করা নয়-তিরস্কার করা। তিনি যখন মন্দিরে যেতেন, তখন পথের লোকজন সব দূরে সরে দাঁড়ােত, কেননা তাঁর সকল অঙ্গ, তার বর্ণ ও রেখার নীরব ভাষায় সকলকে বলত, “দূর হ ! চায়া মাড়ালে নাহঁতে হবে।” বলা বাহুল্য, তিনি কোনও দিকে দৃকপাত করতেন না, মাটির দিকে চেয়ে সকল পথ রূপে আলো করে সোজা মন্দিরে যেতেন, আবার ঠিক সেই ভাবে বাড়ী ফিরে আসতেন। রঙ্গিণী জানালার ফাঁক svg রত্নময়ীকে নিত্য দেখত, এবং তার সকল মন, সকন্তু দেই হিংসার বিন্ধে জর্জরিত হয়ে উঠত, যেহেতু রাঙ্গণীর আর যাই থাক, রূপ ছিল না। আর তার রূপের অভাব তার মনকে অতিশয় ব্যথা দিত, কেননা তার স্বামী রীতিলাল ছিল অতি সুপুরুষ। ধনঞ্জয় যেমন টাকা ভালবাসতেন, রঙ্গিণী তেমনি তার স্বামীকে ভালবাসত, অর্থাৎ এ ভালবাসা একটি প্রচণ্ড স্মৰ্প৷ ব্যতীত আর কিছুই নয়, এবং সে ক্ষুধা শারীরিক ক্ষুধার মতষ্ট অন্ধ ও নির্মম । এ ভালবাসার সঙ্গে মনের কতটা সম্পর্ক ছিল বলা কঠিন, কেননা ধনঞ্জয় ও রঙ্গিণীর মত জীবদের মন, দেহের অতিরিক্ত নয়, অন্তভূর্ত বস্তু। তারপর ধনঞ্জয় যে ভাবে টাকা ভালবাসতেন, রঙ্গিণী ঠিক সেই ভাবে তার স্বামীকে