পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&3s אס ל ভালবাসত--অর্থাৎ নিজের সম্পত্তি হিসেবে । সে সম্পত্তির উপর কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারে, এ কথা মনে হলে সে একেবারে মায়ামমতাশূন্য হয়ে পড়ত, এবং সে সম্পত্তি রক্ষা করবার জন্য পৃথিবীতে এমন নিষ্ঠুর কােজ নেই, যা রঙ্গিণী না করতে পারত। রঙ্গিণীর মনে সম্পূর্ণ অকারণে এই সন্দেহ জন্মেছিল যে, রীতিলাল রত্নময়ীর রূপে মুগ্ধ হয়েছে ; ক্রমে সেই সন্দেহ তার কাছে নিশ্চয়তায় পরিণত হল। রঙ্গিণী হঠাৎ আবিষ্কার করলে যে, রাতিলাল লুকিয়ে লুকিয়ে উগ্রনারায়ণের বাড়া যায়, এবং যতক্ষণ পারে। ততক্ষণ সেইখানেই কাটায়। এর যথার্থ কারণ এই যে, রীতিলাল রত্নময়ীর বাড়াতে আশ্রিত যে ব্ৰাহ্মণটি ছিল, তার কাছে ভাঙ্গ খেতে যেত। তারপর রত্নময়ীর ছেলেটির উপর নিঃসন্তান রাতিলালের এতদূর মায়া পড়ে গিয়েছিল যে, সে কিরািটচন্দ্ৰকে না দেখে একদিনও থাকতে পারত না। বলা বাহুল্য, রত্নময়ীর সঙ্গে রাতিলালের কখনও চার চক্ষুর মিলন হয়নি, কেননা পাঠানপাড়ার প্ৰজারা তার অন্তঃপুরের দ্বার রক্ষা করত। কিন্তু রঙ্গিণীর মনে এই বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে গেল যে, রত্নময়ী তার স্বামীকে সুপুরুষ দেখে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে । এর প্রতিশোধ নেবার জন্য, তার মজ্জাগত হিংসাপ্রবৃত্তি চরিতাৰ্থ করবার জন্য, রঙ্গিণী রত্নময়ীর ছেলেটিকে যখ দেবার জন্য কৃতসংকল্প হল। রঙ্গিণী একদিন ধনঞ্জয়াকে জানিয়ে দিলে যে যখ দেওয়া সম্বন্ধে তার আর কোনও আপত্তি নেই, শুধু তাই নয়, ছেলের সন্ধান সে নিজেই করবে। এ কাজ অবশ্য অতি গোপনে উদ্ধার করতে হয়। তাই বাপে মেয়েতে পরামর্শ করে স্থির হল যে, রঙ্গিণীর শোবার পাশের ঘরটিতে যখ দেওয়া হবে। দু’চার দিনের ভিতর সে ঘরটির সব দুয়ার জানালা ইট দিয়ে গেথে বন্ধ করে দেওয়া হল । তারপর অতি গোপনে ধনঞ্জয়ের সঞ্চিত যত সোণা রূপার টাকা ছিল সব বড় বড় তামার ঘাড়াতে পুরে সেই ঘরে সারি সারি সাজিয়ে রাখা হল । যখন ধনঞ্জয়ের সকল ধন সেই কুঠরীজাত হল, তখন রঙ্গিণী একদিন রাতিলালকে বললে যে, রত্নময়ীর চেলেটি এত সুন্দর যে, তার সেই ছেলেটিকে একবার কোলে