পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

So 8 झनश्यंशं রাতিলালের গলা শুনে সে ছেলে আরও জোরে কেঁদে উঠত, ঘন ঘন কপাটে মাথা ঠুকত। রািতলাল তখন দুই কাণে হাত দিয়ে ঘরের অন্য কোণে পালিয়ে যেত, ও চীৎকার করে কখনও রঙ্গিণীকে কখনও ধনঞ্জয়কে ডাকত, এবং যা মুখে আসে তাই বলে গালি দিত। এই পৈশাচিক ব্যাপারে সে এতটা হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিল যে, কিরাটচন্দ্রের উদ্ধারের যে অপর কোনও উপায় হতে পারে, এ কথা মুহুর্তের জন্যও তার মনে উদয় হয়নি, তার সকল মন ঐ কান্নার টানে সেই অন্ধকূপের মধ্যেই বন্দী হয়েছিল । তিন দিনের পর সেই শিশুর ক্ৰন্দনধ্বনি ক্রমে অতি মৃদু, অতি ক্ষীণ হয়ে এসে, পঞ্চম দিনে একেবারে থেমে গেল। রািতলাল বুঝলে, কিরাটচন্দ্রের ক্ষুদ্র প্রাণের শেষ হয়ে গিয়েছে। তখন সে তার ঘরের জানালার লোহার গরাদে দু হাতে ফাক করে, নীচে লাফিয়ে পড়ে একদৌড়ে রত্নময়ীর বাড়া গিয়ে উপস্থিত হল। সেদিন দেখলে অন্তঃপুরের দরজায় প্রহরী নেই, পাঠানপাড়ার প্রজারা সব ছেলে খোঁজবার জন্য নানা দিকে বেরিয়ে পড়েছিল। এই সুযোগে রতিলাল রত্নময়ীর নিকট উপস্থিত হয়ে সকল ঘটনা তার কাছে এক নিঃশ্বাসে জানালে। আজ তিন বৎসরের মধ্যে রত্নময়ীর মুখে কেউ হাসি দেখেনি। তার ছেলের এই নিষ্ঠুর হত্যার কথা শুনে তার মুখ চােখ সব উজ্জ্বল হয়ে উঠল, দেখতে দেখতে মনে হল সে যেন হেসে উঠলে। এ দৃশ্য রীতিলালের কাছে এতই অদ্ভুত বােধ হল যে, সে রত্নময়ীর কাছ থেকে ছুটে পালিয়ে কোথায় নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। তারপর, সেই দিন দুপুর রাত্তিরে-যখন সকলে শুতে গিয়েছেরত্নময়ী নিজের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিলে। সকল সরিকের বাড়ী সব গায়ে গায়ে। তাই ঘণ্টা খানেকের মধ্যে সে আগুন দেবতার রোষাগ্নির মত ব্যাপ্ত হয়ে ধনঞ্জয়ের বাড়ী আক্রমণ করলে। ধনঞ্জয় ও রঙ্গিণী ঘর থেকে বেরিয়ে পালাবার চেষ্টা করছিল, সদর ফটকে এসে দেখে রত্নময়ীকে ঘিরে পাঠানপাড়ার প্রায় একশ’ প্ৰজা ঢাল সড়কি ও তলোয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রত্নময়ীর আদেশে তারা ধনঞ্জয় ও রঙ্গিণীকে সড়কির পর সড়কির ঘায়ে আপাদমস্তক ক্ষতবিক্ষত করে সেই জ্বলন্ত