পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বড়বাবুর বড়দিন so is রেখেছিলেন যে, তখন যা বলা কওয়া হত, সে সব নেহাৎ বাজে কথা । ভাইদের সঙ্গে এই হাসি তামাসা, তিনি পটেশ্বরীর চরিত্রের আমোদ . প্রিয়তার লক্ষণ বলেই মনে করতেন। এ অবশ্য তাঁর মোটেই ভাল লগত না । বড়বাবুর স্বভাবটি যেমন চাপা, পটেশ্বরীর স্বভাব ছিল তেমনি খোলা । তার চালচলন কথাবার্তার ভিতর প্রাণের যে সহজ गठ्ठ স্মৃতি ছিল, বড়বাবু তাকে চঞ্চলতা বলতেন, এবং এই চঞ্চলতাকে তিনি বিশেষ ভয় করতেন। তারপর পটেশ্বরীর কোনও সন্তানাদি হয়নি, সুতরাং তার যৌবনের কোনও ক্ষয় হয়নি। যদিচ তখন তার বয়স চব্বিশ বৎসর, তবুও দেখতে তাকে ষোেলর বেশি দেখাত ণ, এবং তার স্বভাব ও মনোভাবও ঐ ষোল বৎসরের অনুরূপই ছিল । বড়বাবুর পক্ষে বিশেষ কষ্টের বিষয় এই ছিল যে, এই সব ভয় ভাবনা তাকে নিজের মনেই চেপে রাখতে হত । পটেশ্বরীর কোন কাজে বাধা দেওয়া কিংবা তাকে কোনও কথা বলা, বড়বাবুর সাহসে কখনও কুলোয়নি। এমন কি, বাঙালী ঘরের মেয়ের পক্ষে, বিশেষত ভদ্রমহিলার পক্ষে শিশ দেওয়াটা যে দেখতেও ভাল দেখায় না, শুনতেওঁ ভাল শোনায় না, এই সহজ কথাটাও বড়বাবু তাঁর স্ত্রীকে কখনও মুখ ফুটে বলতে পারেননি। তার প্রথম কারণ, পটেশ্বরী বড়মানুষের মেয়ে। শুধু তাই নয়, একমাত্র কন্যা। বাপ মা ভাইদের আদর পেয়ে পেয়ে, সে অত্যন্ত অভিমানী হয়ে উঠেছিল, একটি রূঢ় কথাও তার গায়ে সইত না, অনাদরের ঈষৎ স্পর্শে তার চোখ জলে ভরে আসত। আর পটেশ্বরীর চোখের জল দেখবার শক্তি আর যারই থাক-বড়বাবু{ দেহে ছিল না। তা ছাড়া দেবতার গায়ে হস্তক্ষেপ করতে মানুষমাত্রেরই সঙ্কোচ হয়, ভয় হয়, এবং তঁর শ্যালকদের বিশ্বাস অন্যরূপ হলেও, তিনি মনুষ্যত্ববর্জিত ছিলেন না। সে যাই হোক, বড়বাবুর মনে শান্তি ছিল না-বলে যে সুখ ছিল না, এ কথা সত্য নয়। বিপদের ভয় না। থাকলে মানুষে সম্পদের মাহাত্ম্য হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না। এই সব ভয়ভাবনাই বড়বাবুর স্বভাবত কিমান্ত মনকে সজাগ, সচেতন ও সতর্ক করে রেখেছিল। তা পটেশ্বরী সম্বন্ধে তার ভয় যে অলীক এবং