পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বড়বাবুর বড়দিন Σ Σ δ নজর না পড়ে, তার কাছে অবশ্য স্ত্রীকে স্বাধীনতা দেওয়া আর ঘরভাঙ্গা —দুই-ই এক কথা। তারপর স্ত্রী-শিক্ষা সম্বন্ধেও তার ঘোরতর আপত্তি ছিল। স্ত্রীজাতির শরীরের অপেক্ষা মনকে স্বাধীনতা দেওয়া যে কম বিপজ্জনক, এ ভুল ধারণা তার ছিল না। তিনি এই সার বুঝেছিলেন যে, স্ত্রীলোককে লেখাপড়া শেখানোর অর্থ হচ্ছে, বাঙ্গরের লোকের এবং বাজে লোকের মনের সঙ্গে তার মনের ঘনিষ্ঠ পরিচয় করিয়ে দেওয়া। পটেশ্বরী যে সামান্য লেখাপড়া জানত, তার কুফল ত তিনি নিত্যই চােখে দেখতে পেতেন। তিনি তাকে যত ভাল ভাল বই কিনে দিতেন, যাতে নানারূপ সদুপদেশ আছে, পটেশ্বরী তার দুই এক পাতা পড়ে ফেলে দিত ; আর সে বাপের বাড়া থেকে যে সব বাজে গল্পের বই নিয়ে আসত, দিনমান বসে বসে তাই গিলত। সে সব কেতবে কি লেখা আছে তা না জানলেও, বড়বাবু এটা নিশ্চিত জানতেন যে, তাতে যা আছে, তা কোনও বইয়ে থাকা উচিত নয়। স্ত্রীলোকের অল্প লেখাপড়ার ভোগ যদি মানুষকে এইরকম ভুগতে হয়, তাহলে তাদের বেশি লেখাপড়ার ফলে যে সর্বনাশ হবে, তাতে আর সন্দেহ কি ? তারপর যৌবন-বিবাহের প্রচলনের সঙ্গে যে স্বেচ্ছাবিবাহের প্রবর্তন হওয়া অবশ্যম্ভাবী, এ জ্ঞান বড়বাবুর ছিল। আমাদের সমাজে যদি স্বেচ্ছাবিবাহের প্রথা প্রচলিত থাকত, তাহলে বড়বাবুর দশা কি হত ! পটেশ্বরী যে স্বয়ংবর সভায় তীর গলায় মাল দিতেন না, এ বিষয়ে বড়বাবু নিঃসন্দেহ ছিলেন। বড়বাবুর যে রূপ নেই, সে জ্ঞান তার ছিল,—কেননা তীর সর্বাঙ্গ সেই অভাবের কথা উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করত; এবং পটেশ্বরী যে মনুষ্যত্বের মর্যাদা বোঝে না, এ সত্যের পরিচয় তিনি বিবাহাবধি পেয়ে এসেছেন। পটেশ্বরী যে মানুষের চাইতে কুকুর বিড়াল, লাল মাছ, সাদা ইদুর, ছাই-রঙের কাকাতুয়া, নীল রঙের পায়রা বেশি ভালবাসত, তার প্রমাণ ত তীর গৃহাভ্যন্তরেই ছিল। বাপের পয়সায় তঁর স্ত্রী ভঁর অন্দরমহলটি একটি ছোটখাট চিড়িয়াখানায় পরিণত করেছিল। তারপর বিধবাবিবাহের কথা মনে করতে বড়বাবুর সৰ্বাঙ্গ শিউরে উঠত। তিনি এ বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন যে, তিনি