পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

br %म् এর পর নলদময়ন্তী অভিনয় সুরু হল। বড়বাবু হাঁ করে দেখতে লাগলেন। এ যে অভিনয়, এ জ্ঞান দু’মিনিটেই তার লোপ পেয়ে এল, তার মনে হল নল দময়ন্তী প্রভৃতি সত্যসত্যই রক্তমাংসের দেহ ধারণ করে, সাবিত্ৰী থিয়েটারে অবতীর্ণ হয়েছেন। তারপর রঙ্গমঞ্চের উপরে যখন স্বয়ংবির সভার আবির্ভাব হল তখন থিয়েটারের অভ্যন্তরে অকস্মাৎ একটা মহা-গোলযোগ উপস্থিত হল। পুরুষদের মাথার উপরে চিকের অপর পারে, রঙ্গালয়ের যে প্রদেশ মেয়ের অধিকার করে বসেছিলেন, সেই অঞ্চল থেকে একটা ঝড় উঠল। কোনও অজ্ঞাত কারণে সমবেত স্ত্রীমণ্ডলী ঐক্যতানে কলরব করতে সুরু করলেন । ফলে আকাশে স্ত্রী-কণ্ঠের কনসার্ট বেজে উঠল, তার ভিতর ক্লারিওনেট, করনেট প্রভৃতি সব রকমেরই যন্ত্র ছিল, এবং তাদের পরস্পরের ভিতর কারও সঙ্গে কারও সুরের মিল ছিল না। তারপর সেই কনসার্ট যখন দুন থেকে পরদুনে গিয়ে পৌছল, তখন অভিনয় অগত্যা বন্ধ হল। এই কলহ শুনে দময়ন্তীর বড় মজা লাগল, তিনি ফিক্‌ করে হোেস দর্শকমণ্ডলীর দিকে পিঠ ফিরিয়ে দাঁড়ালেন, তাঁর সখীরা সব অঞ্চল দিয়ে মুখ ঢাকলেন, আর ইন্দ্ৰ চন্দ্ৰ বায়ু বরুণ প্রভৃতি অভ্যাগত দেবতাগণ তটস্থ হয়ে রইলেন। অমনি silence !! silence !! শব্দে চতুর্দিক ধ্বনিত হতে লাগল, তাতে গোলযোগের মাত্রা আরও বেড়ে গেল। অতঃপর দর্শকের মধ্যে অনেকে দাড়িয়ে উঠে, আকাশের দিকে মুখ করে, গলবস্ত্ৰে যোড়করে, উক্ত স্ত্রী-সমাজকে সম্বোধন করে—“ম লক্ষীরা চুপ করুন” এই প্রার্থনা করতে লাগলেন ; তাতে মা লক্ষসীদের চুপ করা দূরে থাকুক, তাদের কোলের ছেলেরা জেগে উঠে। ককিয়ে কঁদতে সুরু করলে। তখন দর্শকদের মধ্যে দু’চার জন৷ ইয়ারগোছের লোক, অতি সাদা বাঙলায় ছেলেদের মুখবন্ধ করবার এমন একটা সহজ উপায় বাতালে দিলে যা শুনে দময়ন্তী ও তঁর সখীরা অন্তরুদ্ধ হাসির বেগে ধুকতে লাগলেন। বড়বাবু যদিীচ জীবনে কখন কারও প্ৰতি কোনরূপ অভদ্র কথা ব্যবহার করেননি, তথাচ তিনি ভদ্রমহিলাদের এই অপমানে খুসি হলেন। কেননা, তার মতে যারা থিয়েটারে আসতে