পাতা:গল্পসংগ্রহ - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বড়বাবুর বড়দিন Σ ο Σ কি তোলপাড় করছিল, ছটফট করছিল। এক কথায় তার হৃদয়মন্দিরে দক্ষযজ্ঞের অভিনয় সুরু হয়েছিল। তারপর অভিনয়ের টুকরো-টােকরা যা তার চোখে পড়ছিল, তাতে তিনি আরও কাতর হয়ে পড়লেন, এই মনে করে-কোথায় দময়ন্তী, আর কোথায় পটেশ্বরী। তারপর তঁর মনে হল যে, পটেশ্বরী যদি তার কাছে মিথ্যে কথা বলতে পারে, বিশ্বাসঘাতিনী হতে পারে, তাহলে তৃত ভবিষ্যৎ বর্তমানের কোন স্ত্রীলোকের পাতিব্ৰত্যে বিশ্বাস করা যেতে পারে ? তিনি স্পষ্ট দেখতে পেলেন যে, নল-দময়ন্তীর কথা মিথ্যা, মহাভারত মিথ্যা, ধর্ম মিথ্যা, নীতি মিথ্যা, সব মিথ্যা, জগৎ মিথ্যা !!-- মানুষের কষ্টই হচ্ছে এ পৃথিবীতে একমাত্র সত্য বস্তু। তখন তার কাছে ঐ অভিনয় একটা বীভৎস কাণ্ড হয়ে দাঁড়াল। এদিকে তার হাত পা সব হিম হয়ে এসেছিল, তার মাথা ঘুরছিল, তার সর্বাঙ্গ দিয়ে অনবরত ঘােম পড়ছিল--অর্থাৎ তার দেহে মূৰ্চচ্ছার পূর্বলক্ষণ সব দেখা দিয়েছিল। তিনি আর ভিতরে থাকতে পারলেন না-থিয়েটার থেকে বেরিয়ে গিয়ে খোলা আকাশের নীচে দাড়ালেন। বড়বাবু উপরে চেয়ে দেখলেন যে, অনন্ত আকাশ জুড়ে অগণ্য নক্ষত্র তাঁর দিকে তাকিয়ে সব চােখ টিপে হাসছে। এ বিশ্ব যে কতদূর নির্মল, কতদূর নিষ্ঠুর, এই প্রথম তিনি তার সাক্ষাৎ পরিচয় পেলেন। তারপর এই আকাশদেশের অসীমতা তার কাছে হঠাৎ প্রত্যক্ষ হয়ে উঠল, এই নীরব নিস্তব্ধ মহাশূন্যের ভিতর দাঁড়িয়ে তঁর वर्द्ध এক একা ঠেকতে লাগল। -তীর মনে হল, এই বিরাট বিশ্বের কি ভিতরে কি বাইরে কোথাও প্ৰাণ নেই, মন নেই, হৃদয় নেই, দেবতা নেই। --যা আছে তা হচ্ছে আগাগোড়া ফাঁকা, আগাগোড়া ফাঁকি। সেই সঙ্গে তিনি যেন দিব্যচক্ষে দেখতে পেলেন যে, ওই সব গ্ৰহ চন্দ্র তারা প্রভৃতি আকাশপ্ৰদীপগুলো ঐ থিয়েটারের বাতির মত দুদণ্ড জুলে যখন নিবে যাবে, তখন সংসার-নাটকের অভিনয় চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে, আর থাকবে শুধু অসীম অনন্ত অখণ্ড অন্ধকার! আমনি ভয়ে তার বুক চেপে ধরলে, তিনি এই অনন্ত বিভীষিকার মূর্তি চােখের আড়াল করবার >W。